পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী বন্দোবস্ত করিয়া যাওয়া ভাল। উহাকে বিষয় দিব না ত কাহাকে দিব ? সেই মাতাল জামাইটা শেষকালে সমস্ত বিষয়টা কাড়িয়া লইবে ? না না, সে কথা নহে, আমার প্রাণের গোপবালাকে কিছ দিয়া যাইব । আর যদি ছোট গহিণী দ্বারা আমার পত্রসস্তান হয়, তাহা হইলে সেই পাইবে, মাকে দেওয়াও যা, ছেলেকে দেওয়াও তাই। অনেক বিবেচনা করিয়া বদ্ধ বদ্ধমানে গেলেন। তথায় উকীল মোক্তারদের সহিত পরামর্শ করিয়া, রেজিস্টরি আপিসে হাঁটাহাঁটি করিয়া শেষে একখানি দলীল লইয়া বাড়ী আসিলেন, এবং বাড়ীতে পাহছিয়াই নববধরে রাঙ্গা চরণে পজা দিতে আসিলেন । হাস্যগদগদ স্বরে তরুণী ভাৰ্য্যাকে সম্ভাষণ করিয়া দলীলখানা তাঁহার হস্তে দিলেন, মনে করিলেন,–এবার উড়াপাখি পিঞ্জরে পরিলাম,—এ কুহক মন্ত্র এড়াইবার নহে, দেখিব মন গলে কি না গলে। অভিমানিনী বধ স্বামীর দিকে একবার ফিরিয়া চাহিলও না! তারিণীবাব। বলি চুপ করে রৈলে যে ? বধ। তবে কি করিব ? তারিণীবাব । দলীলখানা কি জান ? বধ । কেমন করে জানিব ? তারিণীবাব । এখানা উইল । বধ ! শুনিলাম। তারিণীবাব। বড় মল্যবান দলীল। বধ । তোমার বাকসে রাখিয়া দাও । তারিণীবাব । আমার ভালমন্দ হইলে আমার বিজয়পরে তালকেখানি তোমারই হইবে। বধ । আমার চাই না। তারিণীবাব । সে কি ? সে কি ? এত অভিমান কিসের ? বধ। অভিমান আবার কি ? যে মানে রেখেছ, ঢের হয়েছে। তারিণীবাব অবাক হইয়া রহিলেন ! বধ চক্ষ মাছিতে লাগিলেন ! তারিণীবাব দলীলখানি জোর করিয়া বধহস্তে দিলেন। বধ দলীলখানি খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিড়িয়া ফেলিয়া ক্রোধে হন হন করিয়া চলিয়া গেলেন! রাত্রি হইয়াছে। ছোট গহিণী খান নাই, দরজা বন্ধ করিয়া শুইয়াছেন। তারিণীবাবর মুকু মাত পলি বদ্ধ দ্বারদেশে কালীঘাটের কাঙ্গালীর মত বসিয়া মিনতি করিতে গলেন । এক ঘণ্টা মিনতির পর দরজা খলিল। বধ বলিলেন,—আবার হাড় জবালাইতে আসিয়াছ কেন ? তারিণীবাব সেই রাঙ্গা চরণ দুইটী আপনার কলপ দেওয়া চুলের উপর স্থাপন করিয়া বলিলেন,—কি অপরাধ করিয়াছি বল"? বধ । অপরাধ আবার কি ? তারিণীবাব । দলীলখানা ছিড়িলে কেন ? বধ । কি দলীল ? তারিণীবাব। আমার প্রধান তালকেখানি তোমাকে উইল করিয়া দিয়াছিলাম। বধ। আর সম্প্রতি যে জমীদারী কিনিয়াছ, সেটা বুঝি দিদিকে গোপনে দেওয়া হইবে ? তা দিদি তোমার নয়নের তারা, দিদি তোমার মাথার মণি,—দিদিকে সব্বস্ব দিয়ে যাও ! আমি গরিবের মেয়ে, আমি তোমার চক্ষর শলে হইয়াছি, আমাকে ভিখারীর মত তাড়াইয়া দাও, আমি গরিব মার কাছে চলিয়া যাই। লোকের বাড়ী ধান ভানিয়া খাইব, তব তোমার অন্ন খাইব না,— এ অপমান, এ লাঞ্ছনা, এ যাতনা আর সহ্য হয় না! (ক্ৰন্দন) তারিণীবাব বিস্মিত হইলেন । তিনি সম্প্রতি একটী জমাদারীর অংশ নিলামে ক্রয় করিয়াছিলেন, কিন্তু সে কথা গহিণীদের বলেন নাই। সে কথা গোপবালাকে কে বলিল ? নববধ সেটাও চাহেন নাকি ? সবসব নববধাকে উইল করিয়া যাইলে উমার মার দশা কি হইবে ? এইরুপ নানা চিন্তা তারিণীবাবরে হৃদয়ে উদয় হইতে লাগিল। সেয়ানা মেয়ে গোপবালা স্বামীর মনের সন্দেহ বুঝিতে পারিয়া আবার উচ্চৈঃস্বরে ক্ৰন্দন 88ર