পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नध्याछ. করিয়া বলিল, “আমাকে ছেড়ে দাও, আমি পথের কাঙ্গালী হইব, পথে ভিক্ষা করিয়া খাইব । আমাতে তোমার যখন বিশ্বাস নাই, তখন আমি এ বাড়ীতে থাকিব না, গাছতলায় শাইয়া থাকিব। যাহার উপর বিশ্বাস আছে, সেই দিদির কাছে যাও,—আমাকে ছেড়ে দাও, আর দন্ধ করিয়া মারিও না।” রমণী আছাড় খাইয়া পড়িল,—বঝি বা হিস্টিরিয়া হয়,—বড়মানুষী ব্যারামটাও দরকারের সময় গোপবালার আসিত। সে রাত্রির কথা অধিক বর্ণনায় আমরা অক্ষম। একদিকে তারিণীবাবর ভীষণ বিষয়-কামনা, অন্যদিকে তরণী ভাষার ভয়ঙ্কর উপদ্রব,—আজি পথের ভিখারীও তারিণীবাবরে অবস্থা দেখিলে দুঃখিত হইত। তীক্ষা বৃদ্ধিমতী ঘন ঘন অশ্ৰবাণ, অভিমান-বাণ, ক্ৰন্দন-বাণ, হিস্টিরিয়া-বাণ, আবার মিনতি-বাণ, ভালবাসার বাণ দ্বারা বন্ধের শরীর জজরিত করিলেন। কখন তজন গজন, কখন সাধ্য সাধনা, কখন বা মিনতি, কখন কত গল্প বলেন। কলিকাতার কত বড়মানুষ সমস্ত বিষয় সন্ত্রীকে দিয়া গিয়াছেন, স্বামীর অবত্তমানে সী সন্দেররাপে সংসার চালাইতেছেন। নারী কি বিশ্বাসঘাতিনী ? নারী কি সবামীর সংসার স্বামীর ঘর কখন অবহেলা করিয়া জীবন ধারণ করিতে পারে ? সবামীর ঘর ভিন্ন নারীর কি অন্য ঘর এ জগতে আছে ? সমস্ত রাত্রি এইরুপ যুদ্ধ চলিল, প্রাতঃকালের প্রথম আলোকচ্ছটা পবেদিকে দেখা দিল, তখন বিষয়ী তারিণীবাব পরাস্ত হইলেন। বলিলেন, “হৃদয়ের ধন! তোমাকে দিব না ত কাহাকে দিব,--আমার যথাসব্বস্ব তোমাকে লিখিয়া দিব, তুমি বড়, না আমার জমীদারী বড় ?” সমর-বিজয়িনী গোপবালা তখন নয়নের অশ্র মুছিয়া স্বামীর হাত ধরিয়া মাটী হইতে উঠাইয়া আপন পাশ্বে স্থান দিলেন, এবং স্নেহগদগদ বরে বলিলেন, “তুমিই আমার ধন, তুমিই আমার সব্বাস্তব, তুমিই আমার জীবন। বিষয় কি তুচ্ছ,—তোমার স্নেহ পাইলে সবই পাইলাম।” এতক্ষণে বঝিলে ? সে কি বড়ো মিনষের রপে দেখে বিয়ে করেছিল ? যার জন্য বিয়ে করেছিল, সে কাজ আজ উদ্ধার হইল।” এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত কাজ সমাধা হইয়া গেল। তারিণীবাব আজীবন চাকরী করিয়া ন্যায় ও অন্যায় মতে যে বিষয় করিয়াছিলেন,—পৈতৃক সম্পত্তিও নিজে যাহা করিয়াছিলেন– বিন্দ ও সন্ধার বাপের কাছে যাহা ঠকাইয়া লইয়াছিলেন-গ্রামের লোকের সঙ্গে মকদ্দমা পাইয়া কিনিয়াছিলেন-সে সমস্ত আদ্য তরণী ভাৰ্য্যাকে উইলপত্র দ্বারা লিখিয়া দিলেন। বাদ্ধা, শোকগ্রস্তা, চিরপতিব্ৰতা উমার মাকে উদ্ধতা যুবতী সতীনের দয়ার উপর ভাসাইলেন,— ঘরের সন্তানের ন্যায় বিন্দকে চিরদারিদ্র্যে ভাসাইলেন । উমার মা এ সংবাদ শুনিলেন, বুঝিলেন, তিনি সপত্নীর ঘরে আশ্রিতা হইবেন, সপত্নীর অন্নে পালিতা থাকিবেন, সপত্নীর দাসী হইয়া পরিচয্যা করিবেন। মন্মষে রোগীর এ মমাব্যথা অধিক দিন ভোগ করিতে হইল না,—কয়েক দিনের মধ্যে রোগক্লিস্টা, শোক-বিদগ্ধা নারী মৃত্যুগ্রাসে পতিত হইলেন। বিন্দ ও সন্ধা জ্যেঠাইমার শেষ অবস্থায় অনেক সেবা করিলেন, জ্যেঠাইমার গলা ধরিয়া উমাতারাকে ডাকিয়া উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিলেন। তখন নববধ মল্লিক বাড়ীতে জমকাইয়া বসিলেন। ক্রমে উইল-লিখিত সমস্ত সম্পত্তি স্বামীর জীবিতাবস্থাতেই দখল করিতে লাগিলেন। তারিণীবাবুও তাহাতে আপত্তি করিলেন না, নববধরে কোনও কায্যে প্রতিরোধ করিতে তাঁহার সাহস হইয়া উঠিত না। তারিণীবাব পাড়ায় পাড়ায় ঘোরেন, লোকের সঙ্গে বিবাদ ঝগড়া করেন, গহস্থদের গালি দেন, পড়শীদের শাসন করেন,—আর বাড়ীতে আসিয়া ভিজে বেড়ালের মত আস্তে আস্তে লুকাইয়া থাকেন। সমস্ত বিষয় দিয়াও তরণীর মন পাইলেন না, তরণীর অভিমান ও দপ' ভাঙ্গিতে পারিলেন না। বিষয়কাৰ্য্য এখন গোপবালাই দেখেন—তাঁহার মন্ত্রী গোকুলচন্দ্র। তারিণীবাব দুই বেলা দই পেট খাইতে পান, বাহিরের ঘরে একাকী বসিয়া থাকেন, অথবা উমার মা যে ঘরে মরিয়াছে, সেই ঘরে এক একবার যাইয়া ভাবেন। কেহ কেহ বলিত, উমার মার জন্য এত দিন পর শোক হইয়াছে। কেহ বলিত, দুঃখিনী বিন্দকে কিছ না দিয়া সমস্ত বিষয় গহিণীকে উইল করিয়া দিয়া বন্ধের মনস্তাপ হইয়াছে। কেহ বলিত, তা নয়, তা নয়, বড়োর ভীমরতি ধরিয়াছে। جلیٹه 88○