পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী তারিণীবাবরে ভীমরতি ধরে নাই—তিনি এখন সব্বদাই পুরাতন কথা চিন্তা করিতেন,— এবং সেই চিন্তা করিতে করিতে মনে একটা মতলব স্থির করিতেছিলেন। অষ্টম পরিচ্ছেদ ঃ তালপুকুরের ইতিহাস আমরা এতক্ষণ তারিণীবাবর ইতিহাস লিখিতেছিলাম, কেননা তারিণীবাব তালপুকুরের মধ্যে বড়লোক, বড়লোকের কথা কি শীঘ্ৰ শেষ হয় ? তথাপি তালপুকুরে সামান্য অবস্থার লোকও বাস করিত, তাহাদের সম্প্রবন্ধেও দুই-একটী কথা লেখা আবশ্যক। বিন্দ চিরকালই দরিদ্র, কিন্তু এই দরিদ্র অবস্থাতেই স্বচ্ছন্দে সংসার-যাত্রা করিত ও ছেলে দটীকে মানুষ করিত। মেয়ে সশীলার বয়স এখন দ্বাদশ বৎসর হয়েছে, দেখিতে একটা কাহিল ও শ্যামবণ, কিন্তু মেয়েটী সশ্রী ও শান্ত, এবং মার মত চক্ষ দটী কাল, প্রশাস্ত ও বড় সন্দের। ছেলে সবোধটার বয়স নয় বৎসর হইয়াছে, নিকটস্থ সনাতনবাটী গ্রামে ইংরাজী বিদ্যালয়ে পাঠ করিতে যায়, এবং পিতার ন্যায় শান্ত। বিন্দর আর সস্তান হয় নাই। হেমচন্দ্র প্রায় গ্রামেই বাস করেন, জমীর চাষবাস দেখেন, আর বাড়ী বসিয়া দুই একখানা বই পড়েন। বাল্যকাল হইতেই তাঁহার স্বধমে আস্থা ছিল, কিন্তু আমরা বিদ্যালয়ে যে লেখাপড়া শিখি তাহাতে আমাদের নিজের শাস্ত্রে কিছু শিক্ষা পাই না। হেমচন্দ্রের সংস্কৃত শাসত্রাদি পড়িতে বড়ই ইচ্ছা হইল। এ বয়সে তিনি টোলে গিয়া শিক্ষা করিতে পারেন না, কিন্তু তাঁহার ভাগ্যক্রমে শাস্ত্রশিক্ষার একটী সংযোগ ঘটিল। সনাতনবাটীতে সম্প্রতি রমাপ্রসাদ সরস্বতী নামে একজন বহু শাস্ত্রবিশারদ পণ্ডিত আসিয়া বাস করিতেছেন, অনেক শিক্ষাথীর্ণ তাঁহার কাছে শাস্ত্র পাঠ করিতে যাইত, হেমচন্দ্রও পশ্চত্রিংশ বৎসর বয়সে তাঁহার নিকট কিছু কিছু সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করিতেন, এবং সব্বদা শাস্ত্রের আলোচনা করিতে ভালবাসিতেন। ক্রমে হেমচন্দ্রের সহিত রমাপ্রসাদের বড়ই সৌহৃদ্য জন্মিল। রমাপ্রসাদের বয়স ৪৫ বৎসর পার হইয়াছে, কিন্তু তিনি বহল বৎসরাবধি কাশীধামে বাস করিয়া অধ্যয়নাদি করিয়াছেন, এবং পশ্চিমদেশের অনেক তীথে পয্যটন করিয়াছেন, সতরাং তাঁহার শরীর এখনও তেজঃপণ ও বলিষ্ঠ । তিনি মস্তকে জটা ধারণ করিতেন, দীঘ শমশ্র রাখিয়াছিলেন, হরিদ্রাবসন পরিধান করিতেন, এবং প্রাচীন শাসত্রাদিতে শিক্ষা দান করিয়া দিন কাটাইতেন। তাঁহার দেবীপ্রসাদ নামে পঞ্চদশ বৎসরের একটী সন্তান ছিল, সে পিতার সহিত পশ্চিমে অনেক ভ্রমণ করিয়াছে, পিতার ন্যায় তেজঃপণ ও উদারচেতা। সে এখন সনাতনবাটীর বিদ্যালয়ে ইংরাজী শিক্ষা করে, এবং পিতার নিকট সংস্কৃত অধ্যয়ন করে। দেবীপ্রসাদ বালক সবোধকে বড় ভালবাসিত, সব্বদা eee BB BBBBB BB BB BBB BB BBBB BBB খেলা | সন্ধা বিবাহের পর কয়েক বৎসর শরতের সঙ্গে কলিকাতায়ই বাস করিতেন, কখন কখন গ্রামে আসিতেন। শরচ্চন্দ্র একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলিতে উত্তীণ হইলেন, পরে একটী উপযুক্ত চাকরীর সন্ধান করিতে লাগিলেন। একবার ইচ্ছা হইল, বিলাতে যাইয়া বড় পরীক্ষা দিয়া ভাল চাকরী লইয়া আইসেন, কিন্তু শরতের সেরাপ আয় নাই যে বিলাতে যাইয়া কয়েক বৎসর থাকেন। শুনিলেন, দেশেও ভাল পরীক্ষা দিতে পারিলে “স্ট্যাটটার সিভিল সাভিস"-এ প্রবেশ করিয়া উচ্চকৰ্ম্ম পাওয়া যায়, সতরাং সেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতে লাগিলেন। তাঁহার ন্যায় বৃদ্ধিমান, উৎসাহী কৃতবিদ্য লোক পরীক্ষায় ব্যর্থপ্রযত্ন হইলেন না। যে বৎসর পরীক্ষায় উত্তীণ হইলেন, সেই বৎসরই তালপাকুর গ্রামে সাধার একটী পত্রসন্তান হইল। সাধা এটী সলক্ষণ মনে করিয়া বড় স্নেহে পাত্রের মুখ চুম্বন করিলেন। খোকার মাসী বড় ষত্নে খোকার শশ্রেষা করিতেন, এবং খোকার বাপ সহষে পত্রমুখ দেখিয়া চাকরীস্থান পশ্চিম অঞ্চলে চলিয়া গেলেন । সেই অবধি দুই বৎসর শরচ্চন্দ্র বিদেশে বিদেশেই রহিলেন,দই বৎসরের মধ্যে বাড়ী আসিতে পারেন নাই। স্বামীকে এত দিন ছাড়িয়া থাকা সাধার পক্ষে বড়ই কটকর হইয়াছিল, গোপনে গোপনে চিঠি দিতেন, দিদির কাছে গিয়া আশ্রম বর্ষণ করিতেন, আবার পত্রটাঁকে চুম্বন 888 •