পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रट्ञभ ज्ञानाबब्ली শরৎকে সকলে যখন একঘরে করে, তখন শরতের মাতা হৃদয়ে বড় ব্যথা পাইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার গরদেব বলিলেন, “মা, কিছ ভাবিও না, ব্রাহ্মণ প্রজারী তোমার বাড়ীতে আসে না আসে তাহাতে ক্ষতি বৃদ্ধি নাই। তুমি যে নিয়মে পজা-আহ্নিক কর, সেই নিয়মেই করিতে থাক, পাজারী ব্রাহ্মণের সাহায্য অনাবশ্যক। মনের সহিত ভগবানকে ডাকিলেই ভগবানের আরাধনা হয়, ভগবানের আরাধনায় মোক্তারনামা আবশ্যক হয় না।” শরতের মাতা সেই পরামর্শই গ্রহণ করিলেন। তাঁহার পণ্যবলে শরৎ সকল পরীক্ষায় উত্তীণ হইয়া উপযুক্ত কায্য পাইয়াছেন, আজ বিদেশ হইতে আসিয়া ভক্তিভাবে মাতার চরণ ধরিয়া প্রণাম করিলেন। বিন্দর ও কালীতারা শরতের কাছে বসিয়া কত যত্ন করিলেন, কত কথা জিজ্ঞাসা করিলেন । শরৎও তাঁহাদের যথেস্ট সম্ভাষণ করিলেন। পাশ্বে দণ্ডায়মান অবগঠিনবতী সন্ধার ক্রোড় হইতে প্রিয় শিশুকে ক্রোড়ে লইয়া ঘন ঘন চুম্বন করিলেন,—আনন্দে সাধার নয়ন হইতে ঝর ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল । * রাজপরিষেদিগের আহবানাথ নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে বড় ধর্ম হয়। পণ্যচরিত্র পণ্যহৃদয় শরচ্চন্দ্রকে আহবান করিবার জন্য আজ সেই ক্ষুদ্র কুটীর যেরপে স্নেহের লহরীতে ভাসিল, তদপেক্ষা প্রকৃত স্নেহ, প্রকৃত প্রেম, প্রকৃত ভালবাসা এ জগতে দষ্ট হয় না। শরৎ অনেকক্ষণ পর মুখ প্রক্ষালন করিলেন। অবগঠেনবতী সন্ধা সযত্নে জলখাবার আনিয়া দিলেন। জল খাইয়া পনরায় হেমচন্দ্রের সহিত বাহিরের ঘরে যাইয়া সমবেত বন্ধদিগের সহিত গলপ করিতে লাগিলেন। গ্রামের সকলের কুশলবাত্তা জিজ্ঞাসা করিলেন, দরিদ্র ও বিপদগ্ৰস্তদিগকে আশর সাহায্য দানে প্রতিশ্রত হইলেন, সাধারণের ব্যবহায্য পঙ্করিণী ও পথঘাট সংস্কারের জন্য কৃতসঙ্কল্প হইলেন, পীড়িতদিগের ঔষধাদি দানের ব্যবস্থা করিলেন, দরিদ্র বালকদিগের বিদ্যালয়ের মাহিয়ানা দিতে স্বীকৃত হইলেন। বদ্ধদিগের কাহারও ছেলেদের পড়িবার প্রস্তক চাই, কাহারও পিতৃশ্ৰাদ্ধে কিছু সাহায্য চাই, কাহারও ঘরটী ছাইবার জন্য কিছু খড় চাই। শরৎ দুই বৎসর পর দেশে আসিয়াছেন, কাহাকেও বঞ্চিত করিলেন না, সকলকেই সাহায্যদানে প্রতিশ্রত হইলেন। রাত্রি প্রায় দেড় প্রহরের সময় আহার প্রস্তুত হইয়াছে। হেম ও শরৎ আহারে বসিলেন। বিন্দ তাঁহাদের কাছে বসিলেন, কালীতারা রন্ধনে অতুল্যা, তিনি ভাইকে মনের মত খাওয়াইয়া তৃপ্তিলাভ করিলেন । পরে মেয়েদের খাওয়াদাওয়া হইল। রাত্রি দ্বিপ্রহরের পর হেম ও বিন্দ বিদায় হইলেন। বিন্দ বিদায় হইবার প্বে শরতের হাত ধরিয়া তাঁহার শয়নঘর পর্য্যন্ত লইয়া গিয়া বলিলেন, “এখন তোমার ধন তুমি বুঝিয়া লও, আমরা চলিলাম !" ঘরে প্রবেশ করিয়া শরৎ দেখিলেন, শয্যায় শিশু নিদ্রিত রহিয়াছে, পাশ্বে একটী প্রদীপ জলিতেছে, এবং শিশরে নিকটে পাণযৌবনা, পতিপ্রাণা, লজাবনতা সন্ধা রঞ্জিত মুখখানি হে’ট করিয়া বসিয়া রহিয়াছেন! এক মহত্তে কাল সেই পণ্য ছবিটী দেখিলেন-প্রদীপের স্তিমিত আলোকে হৃদয়ের সব্বাস্তব রত্নকে নিরীক্ষণ করিলেন,—ধীরে ধীরে সাধার পাশ্বে আসিয়া সেই কোমল প্রেমবিহবল দেহলতা হৃদয়ে ধারণ করিয়া সেই কম্পিত ওঠেদ্বয়ে গাঢ় চুম্বন করিলেন। সন্ধা চক্ষ মনুদিত করিলেন, সংজ্ঞাশন্য হইয়া কোমল বাহুলতা দ্বারা পতির গলদেশ জড়াইয়া ধরিলেন—বহুদিনের হৃদয়ের ব্যথা ভুলিলেন। পতিপ্রাণা সন্ধার পণে হৃদয় সফগীত হইতে লাগিল, নয়ন দটী আনন্দবারিতে আপ্লত হইল। সাদরে সে জল মছাইয়া দিয়া সে সন্দের নয়নদ্বয়ে বারবার চুম্ববন করিয়া শরচ্চন্দ্র বলিলেন, “সন্ধা,-আমি জগতের মধ্যে ভাগ্যবান যে তোমার মত রমণীরত্ন আমার হৃদয়াকাশে শোভা পাইতেছে, আমার জীবনাকাশে চিরকাল দীপ্ত রহিয়াছে। সবদেশে, বিদেশে, সখে, শোকে, সন্তাপে, তুমিই আমার নয়নমণি, তুমি আমার গহলক্ষয়ী।" সন্ধা কিছ: উত্তর দিতে পারিল না—স্বামীর স্নিগ্ধ প্রেমপর্ণ মাখের দিকে আবার সজল নয়নে চাহিল, আবার স্বামীর বক্ষে মুখ লুকাইয়া ঝর ঝর করিয়া নয়নজল ত্যাগ করিল। পতিপ্রাণা সাধার মনের কথা যদি বাক্যে প্রকাশ করিবার ক্ষমতা থাকিত, তবে সে বলিত, “পথের কাঙ্গালিনীকে কুড়াইয়া হৃদয়ে স্থান দিয়াছ,-দঃখিনীর জন্য কত নিন্দা ও কষ্ট সহ্য

  • 88br