পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ ঃ গ্রামে মহৎ আন্দোলন রমাপ্রসাদের নতন প্রথায় শাস্যুপ্রচার লইয়া গ্রামে অনেক আন্দোলন হইতে লাগিল । নানারপ লোকে নানারপ কথা কহিতে লাগিল। যাঁহারা প্রকৃত পণ্ডিত, তাঁহারা রমাপ্রসাদের পাণ্ডিত্যের প্রশংসা করিতে লাগিলেন, যাঁহারা পাণ্ডিত্যের ভাণ করেন, তাঁহারা রমাপ্রসাদকে বিকৃতমস্তিক বলিয়া দুটা গালি দিলেন। পরের একটা উপকার করিলে যাঁহাদের হৃদয়ে আনন্দ হয়, তাঁহারা রমাপ্রসাদের সাহায্য করলেন, পরের নিন্দ রটাইয়া বেড়াইয়া যাহারা দপয়সা আয় করেন, সে ক্ষুদ্রভাগ্যগণ রমাপ্রসাদের নিন্দা রটাইয়া দপয়সা আয় করিলেন । শাস্ত্রশিক্ষা দিয়া দেশের লোকের হৃদয় উন্নত করা, চরিত্র গঠিত করা, যাঁহাদের উদ্দেশ্য, তাঁহারা রমাপ্রসাদের সহিত সহানুভূতি করিতে লাগিলেন, এবং শাস্ত্রপ্রচার হইলে ষাঁহাদের ব্যবসা উঠিয়া যায়, অন্ন উঠিয়া যায়, তাঁহারা রমাপ্রসাদের বিরাদ্ধাচরণ করিতে লাগিলেন ! গ্রামের উন্নতি, দেশের উন্নতি হইলে যাঁহারা তুষ্ট হয়েন, তাঁহারা রমাপ্রসাদের শিক্ষাদানে আনন্দিত হইলেন, এবং দেশের সামাজিক বা ধম্মবিষয়ক উন্নতি হইলে যাঁহাদের একচেটিয়া উঠিয়া যায়, তাঁহারা রমাপ্রসাদের ধৰ্ম্মম সম্প্রবন্ধীয় উন্নতিচেল্টা দেখিয়া,--বেহম্মদ গালি দিলেন! এইরুপে পাড়ায় পাড়ায় সরস্বতী ঠাকুরের কথা লইয়া আন্দোলন বাড়িতে লাগিল, এবং তাহার সঙ্গে সঙ্গে একটী নিন্দার কথা রটিল। হেমচন্দ্র ও শরতের সহিত সরস্বতী ঠাকুরের যে কথাবাত্ত হইয়াছিল, জমিদার-বাড়ীর কেহ কেহ আড়ালে থাকিয়া তাহা শনিয়াছিলেন। তাঁহারা এখন অনুগ্রহ করিয়া রটাইলেন যে সরস্বতী অন্যজাতীয়া নারী বিবাহ করিয়া জাতি হারাইয়াছেন, সনাতনবাটীর লোকের সব্বনাশ ত আসিয়াছেন, তালপুকুরের হেমবাবর কন্যার সহিত নিজ পত্রের বিবাহ দিতে বসিয়াছেন। সহসা রাত্ৰিযোগে গ্রামে অগ্নি লাগিলে eeiBB S BBB S BBBBS প ! সনাতনবাটীর ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা এই অধমাচারী ভণ্ড জটাধারীকে লক্ষ্য করিয়া যথেস্ট নিন্দাবাদ করিলেন। প্রাচীন সম্প্রদায়, প্রাচীন হিন্দ-আচার ধবংসপ্রাপ্ত হইতেছে বলিয়া আক্ষেপ করিলেন। নব্য সম্প্রদায়, আৰ্য্য-রীতির ব্যতিক্রম হইতেছে বলিয়া ইংরাজী ভাষায় অনেক তকবিতক করিলেন। জমিদার-বাড়ীর মেয়েমহলে ক্ষত্রিয়া-প্রণয়-বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ ঠাকুরকে লক্ষ্য করিয়া অনেক ব্যঙ্গ করা হইল। তালপুকুরের দাদামহাশয় সন্ধ্যার সময় ডাবা হংকা টানিতে টানিতে বলিলেন,—“এ আর কিছুই নয়—মেয়েগলা বড় স্বাধীন হইতেছে, তাই যত বিশৃঙ্খলা।” গরীবণী গোপবালা গরবের খোঁপা বাঁধিতে বধিতে বলিলেন,—“কি হয়েছে, কি হয়েছে ? সুশীলার মা বামনের ছেলের সঙ্গে সাশীলার বিয়ে দিবে ? বামন না চণ্ডাল ? তা হবে না কেন ? ওদের ত আর ধম্মাধৰ্ম্মম জ্ঞান নাই, তা না হইলে বিধবার বিয়ে দেয় ?” বৃদ্ধিমান ঘোষালের পো ঘটকীর সঙ্গে কি কথা কহিতেছিলেন, এবং নতন বোঁ বাড়ীতে আনিবেন মনে করিয়া মাচকে মাচকে হাসিতেছিলেন—এমন সময় রমাপ্রসাদের কথা শুনিয়া একেবারে দেশ-হিতৈষিতায় অবশ হইলেন, এবং তৎক্ষণাৎ হ:কা হন্তে লইয়া সমাজ-সংরক্ষণাথ দলবল জটাইতে বাহির হইলেন। এদিকে রক্ষবন্দনা রক্ষচিত্তা বড়ালের বেী ছাতে বসিয়া পায়ে আলতা পরিতেছেন, তিনিও নাপতিনীর নিকট এই কলঙ্ককথা শুনিয়া একেবারে সাপিনীর ন্যায় ফেসি করিয়া উঠিলেন। বলিলেন–“আর কিছ নয়, এখনকার মিনষেগলা একেবারে গোল্লায় গিয়াছে! আসকে না আজ, একবার বেশ শিক্ষা দিব এখন।” সেদিন রাত্রিতে বড়ালমহাশয় যে অমতবচন শুনিলেন তাহা বৰ্ণনা করিতে আমরা অক্ষম। ক্রমে এ কথা জমিদার কামিনীকান্তবাবর কাণে উঠিল। হিন্দুধৰ্ম্ম-সংরক্ষণের জন্য তিনি বিশেষ শিরোবেদনা ভোগ করতেন না, কিন্তু তথাপি তিনি দেশের জমিদার, তিনি হিন্দ-আচার বজায় না রাখিলে কে রাখে? অতএব তিনি আদেশ দিলেন–সন্ন্যাসী ঠাকুরকে জানাইবে, তিনি থাকাতে জমিদার-গহে বড় গোলযোগ হইতেছে, এবং দেশাচাররত স্বধৰ্ম্ম-পরায়ণ বংশেও কিছর কলক পড়িতেছে। ঠাকুর অন্য স্থানে বাসা ঠিক করন। বৈশ্বানরতুল্য তেজঃপণ রমাপ্রসাদকে সহসা একথা কেহ বলিতে সাহস করিল না। জমিদার 台总为“