পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अं... বীরগ্রামের হাঙ্গামা লইয়া সে আপনার উপর খননের দাবী আনিবে,-না আপনি আগে থাকিতে তাহার নামে খনের দাবী আনিয়াছেন । সাবাস ! কামিনী। আমি দাবী আনিব কেন ? সে যে বড় কাঁচা কাজ হয় ! গোপবালা জেলায় দরখাস্ত পাঠাইয়াছে যে তাহার স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুতে সন্দেহের কারণ আছে, সতরাং সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। সতরাং পলিশ তদন্ত করিবে—এবং পলিশ আমাদের হাতে জটাধারী যদি খনের দাবীতে চালান না হয়, তবে আমি ব্যথা এতদিন বিষয়কম করিলাম! সমতি। কামিনীবাব, আপনি আমার নিকট বন্ধস্বরুপ পরামশ লইতে আসিয়াছেন, আমি বন্ধ হইয়া মিথ্যা পরামর্শ দিব না,-আপনি এ কায্যে একটা ভুল করিয়াছেন। এখনকার কালে এরপে মিথ্যা খানের দাবী টিকিবে না, শেষে আপনি বিপদে পড়িতে পারেন। কামিনী। এটা আপনার ভুল। কলিকাতায় কি হয় জানি না, কিন্তু পাড়াগাঁয়ে আবালবদ্ধবনিতা সকলে যে কথা জানে, বিচারাসন পৰ্য্যন্ত সে কথা প’হছে না,—এই আমাদের আধুনিক বিচারের নিয়ম! কার ধান কে কেটে নিল গ্রামসদ্ধে সকলে জানে, বিচারক মাথা চুলকাইয়া বুঝিতে পারিলেন না, বিপরীত বিচার করিলেন। জটাধারী নিন্দোষী বলিয়া দেশবিদেশে পরিচিত হউক না কেন, বিচারপতি তাহা জানিবেন না,—শিক্ষিত সাক্ষী যেমন বলিবে, অথ’লন্ধে পলিশ যেমন রিপোর্ট দিবে, তাহার বাহিরে বিচারকের যাইবার উপায় নাই, এই আধনিক বিচারের নিয়ম। সাহেবেরা বিচারদেবীকে একটী ঠলি পরাইয়া তাহার মাত্তি’ করেন না ? আমাদের বিচারপতিরাও চক্ষতে ঠলি পরিয়া এবং কাণে তলা দিয়া আসন গ্রহণ করেন। সন্মতি। এ কথা সত্য, কিন্তু তথাপি, কামিনীবাব সাবধান। ধৰ্ম্মপ্রচারককে খনী বলিয়া প্রমাণ করিতে পারিবেন না। কামিনী। যদি নাই পারি। তথাপি ত কয়েক মাস জটাধারী মহাশয়কে হাবডুব খাওয়াইব, একট বিলক্ষণ শিক্ষাদান করিব। সমতি। এও আপনাদের পাড়াগে’য়ে বৃদ্ধি। মকদ্দমায় শেষে কিছল হইবে না,—কেবল হায়রাণ করিবার জন্য মকদ্দমা করা—এ আপনাদের পাড়াগোয়ে বৃদ্ধি! কামিনী। আর আপনারা কলিকাতার লোক বড় হায়রাণ করেন না,~এককোপে কাটেন। কেমন ? সন্মতি। তা আমরা হিন্দরে ছেলে হয়ে আর কি করি ? এককোপেই কাটিতে হয়। তা এখন সমস্ত অবস্থা বুঝিলাম, এখন কি করিতে হইবে বলনে ? কামিনী। বাল্যকাল হইতে আপনি আমার সহৃদ, আমার পরামর্শদাতা, বিপদ আপদে আমার বন্ধন, এই মকদ্দমায় আপনাকে সাহায্য দান করিতে হইবে। আপনাকে বদ্ধমান যাইতে হইবে, আমার উকীলদিগকে শিক্ষা দিতে হইবে, এই বিষম মকদ্দমাটী আপনাকে স্বহস্তে চালাইতে হইবে। আপনার তীক্ষা বৃদ্ধি, আপনার অসাধারণ উদ্ভাবন-ক্ষমতা, আপনার অসংখ্য বন্ধ ও আলাপী লোক—এ সমস্ত আমার অপরিচিত নহে। আপনি কলিকাতার মধ্যে অদ্বিতীয় ধীসম্পন্ন এটনী, এবং আমার পরম সািহদ, এইজন্য আপনার নিকট আসিয়াছি। অনেকক্ষণ ধরিয়া মকদ্দমার কথা হইতে লাগিল, অনেক আলোচনার পর সমস্ত কাৰ্য্যপ্রণালী ঠিক হইল। রাত্রি দই প্রহরের পর সমতবাব বিদায় লইলেন, যাইবার সময় কামিনীবাবকে বলিলেন,—আপনি বদ্ধমানে যান, আমি হাতের কাজ সমাপন করিয়াই আসিতেছি, তাহাতে আর চিন্তা কি ? বৃদ্ধিমান সন্মতিবাব মনে মনে ভাবিলেন-কামিনীবাবর এ কাজটাতে সহসা হাত দেওয়া হইবে না। নিন্দোষী লোকের উপর খনী মকদ্দমা চাপান-কাজটা কিছর পাড়াগে’য়ে রকম হইয়াছে। প্রথমে জজসাহেবের নিকট উইলখানা জাল প্রমাণ করিলেই হইত। তাহার পর জজসাহেবের অনুমতি লইয়া জটাধারী বেটাকে জালের মকদ্দমায় ফেলিলেই হইত। তা নয় গোঁয়ারের মত একেবারে খননের মকদ্দমা চাপাইয়াছেন। কামিনীবাবরে শরীরখানিও যেমন স্থল, বৃদ্ধিখানিও সেইরপে স্থলে। g૧૪*