পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী কাপড়চোপড় অতি উৎকৃস্ট। তাঁস্তন্ন থানার নিকট একটী সগোপ বিধবা বাস করিত, তাহার জন্য ১২ ভরির সোণার চন্দ্রহার সেকরা তৈয়ারি করিতেছে। দারোগা মহাশয়ের একটা ঘোড়া আছে, এবং বামণে, চাকর ও সইস থানায় বাস করে। দারোগা মহাশয়ের বেতন মাসে ৩০ টাকা। দারোগা মহাশয় বিশেষ তদন্ত করিতে লাগিলেন। ঘনঘন ডাইয়ারি পাঠাইতে i. ডাইয়ারির লেখা অতি সন্দের, অতি পরিকার, এবং অনিন্দনীয়। তদন্তে স্থির হইল যে রমাপ্রসাদ তারিণীবাবকে ঔষধির পরিবত্তে বিষ খাওয়াইয়াছেন, তাহাতেই তারিণীবাবর সহসা মৃত্যু হইয়াছে! প্রমাণ সমস্ত সংগ্ৰহ করিয়া পশ্চিমে সন্ন্যাসীটাকে হাতে হাতকড়ি দিয়া বন্ধ মানে চালান দিতেছেন, এমন সময় ইন্সপেক্টর বাব গ্রামে উপস্থিত হইলেন। ইন্সপেক্টর বাবা শিক্ষিত যবো, কলেজে পড়িয়াছেন, ভদ্রঘরে জন্ম, ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম জ্ঞান আছে। বদ্ধমানে সকলেই তাঁহাকে ভক্তি করিত, তাঁহার দ্বারা মকদ্দমা তদন্ত হয় বলিয়া পক্ষেরা সব্বদা আদালতে আবেদন করিত। তিনি তালপুকুরে মল্লিকদের বাড়ী আসিয়া দেখিলেন দারোগা বাব বসিয়া ধম পান করিতেছেন,—সম্মুখে রমাপ্রসাদ দণ্ডায়মান-হাতে হাতকড়ি। দেখিয়াই তাঁহার আপাদমস্তক শরীর জবলিয়া গেল, কদমসদ্ধ জনতার আসবাদন দারোগা মহাশয়কে কিঞ্চিৎ দান করিতে তাঁহার বড়ই প্রবত্তি হইল,—কিন্তু তিনি সে ইচ্ছা সম্বরণ করিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন,—এ কি ? দারোগা তখন মাথা চুলকাইয়া অসফটম্বরে বলিলেন,—খনি-মকদ্দমায় আসামী চালান দিতেছিলাম,—তা আপনি আসিয়াছেন,—যাহা আজ্ঞা হয় করিব। ইন্সপেক্টর বজ্রনাদে জিজ্ঞাসা করিলেন,-রমাপ্রসাদ সরস্বতী খননের অপরাধী। এই তুমি তদন্তে জানিয়াছ ! দারোগা বড় কিছু উত্তর দিতে পারিলেন না। ইন্সপেক্টর স্বয়ং আসামীর হাতকড়ি খলিয়া দিয়া বলিলেন,-ক্ষমা করন, আপনার উপর যে অভদ্রাচরণ করা হইয়াছে, তাহার জন্য আমি ক্ষমা প্রাথনা করিতেছি। রমাপ্রসাদ। ক্ষমাপ্রাথ’নার কিছুই নাই। দারোগা মহাশয় বোধ হয় নিজের কত্তব্যসাধন করিতেছিলেন মাত্র। ইন্সপেক্টর। ঐ কথাটী উচ্চারণ করবেন না। দেশের যত বদজাত প্রতারক লোকে আজকাল “কত্তব্যসাধন” করিবার ভাণ করিয়া দেশ প্রতারণায় উচ্ছন্ন করিল যাহা হউক, আপনি আজ জামিন দিয়া গহে যান, আমি মকদ্দমার কাগজপত্র দেখি, আপনাকে আবশ্যক হইলে পুনরায় তলব করিব। ইন্সপেক্টর বাবা দারোগাকে থানায় পাঠাইয়া দিলেন, আপনি সমস্ত প্রমাণের কাগজ তন্ন তন্ন করিয়া পাঠ করিলেন। সেই প্রমাণের কথা রিপোর্ট করিয়া কৰ্তৃপক্ষীয়দিগের নিকট আপন মন্তব্য লিখিয়া পাঠাইলেন যে বিষপ্রয়োগ সম্বন্ধে প্রমাণ আছে, কিন্তু সে প্রমাণ সমস্ত মিথ্যা এবং গ্রামের জমিদারদ্বারা সন্ট; তারিণীবাবরে রোগে মৃত্যু হইয়াছে। কর্তৃপক্ষীয়গণ আদেশ পাঠাইলেন--বিষপ্রয়োগদ্বারা হত্যা মকদ্দমার যখন প্রমাণ রহিয়াছে, ইন্সপেক্টর অবিলবে বিচারাথ মকদ্দমা চালান দিবেন। প্রমাণ সত্য কি মিথ্যা আদালতে প্রকাশ পাইবে । রোষে ও দঃখে আশ্রজেল মোচন করিয়া ইন্সপেক্টর বাব মকদ্দমা চালান দিলেন, নিজের ব্যয়ে গরর গাড়ী করিয়া আসামীকে বদ্ধমানে পাঠাইয়া দিলেন। বিপদে আপদে রমাপ্রসাদের মখে এক মহমত্তের জন্য কেহ লান দেখে নাই, ভয়ে সে গম্ভীর প্রসন্নমুখ একদিনের জন্য মেঘাচ্ছন্ন হয় নাই। বদ্ধমানে গমনকালে পত্রকে আলিঙ্গন করিয়া হাসিয়া বলিলেন,—বৎস, বড় সমারোহে বদ্ধমানে বেড়াইতে যাইতেছি, চিন্তিত হইও না, কুশলে ফিরিয়া আসিব ! সজল নয়নে দেবীপ্রসাদ পিতার চরণ ধরিয়া বিদায় লইল । পরে রমাপ্রসাদ হেমচন্দ্রের চক্ষতে জল দেখিয়া বলিলেন,—হেমচন্দ্র, আশ্রজেল মোচন কর, শরীরা যেন মহত্তের জন্যও আমাদের কাতরতা-চিহ্ন না দেখিতে পায়,—পাপ ভিন্ন ভয়ের অন্য কারণ নাই! পরে হেমচন্দুকে এক পাশ্বে ডাকিয়া লইয়া এই মকদ্দমা সম্পবন্ধে যাহা যাহা করিতে হইবে, স্থির অবিচলিত চিত্তে তাহা বুঝাইয়া দিলেন। হেম বিন্দর নিকট বিদায় লইয়া সেই রাত্রিতেই বন্ধ মানে অসিলেন, এবং পরদিন প্রাতের গাড়ীতে কলিকাতায় চলিয়া গেলেন। 88 。