পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रटभश्च ब्रफ़नाबलौ। ছুটীর কয়েকদিন অতিবাহিত হইল। সাহেব-মহলে সে কয়েকদিন ঐ মকদ্দমার অনেক কথা হইত। তারিণীবাবকে সাহেবেরা চিনিতেন, তারিণীবাবরে হত্যায় সকলেই ক্ষন্ধে হইয়াছিলেন, আপনাদিগের শাসনকায্যের গ্রানি বলিয়া জ্ঞান তীব্রুবরে পুলিশ সাহেব কুদ্ধ হইয়া বলিলেন,—সেই হত্যাকারী সন্ন্যাসী যদি এ মকদ্দমায় খালাস পায়, তাহা হইলে বঙ্গদেশে মনুষ্যের জীবন ও সম্পত্তি আর নিরাপদে থাকিবে না। ছটার কয়েকদিন অতিবাহিত হইল।"সৈ কয়েকদিন বন্ধমানের দোকানে, বাজারে, ভদ্রলোকের গহে গহে, এই কথা লইয়া বিশেষ আন্দোলন। তারিণীবাবর খানের কথা শুনিয়া প্রথমে সকলেই বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হইয়াছিল, ক্রমে আসল কথা প্রকাশ পাইতে লাগিল, লোকে কামিনীকান্তবাবর নাম উচ্চারণ করিতে লাগিল, দারোগা বাবর চালাকির উল্লেখ করিতে লাগিল ! বাজারে দারোগা বাবরে মুখ দেখান ভার হইল,—তিনি সাহেব-মহলেই প্রায় মখে দেখাইতেন। ছুটীর কয়েকদিন অতিবাহিত হইল। আজি মাজিস্ট্রেট সাহেব বিচারাসনে বসিয়াছেন, তিনি স্বয়ং এই মকদ্দমা বিচার করিবেন! ইতর ভদ্র অনেক লোকে আজ বিচারগাহ পণে, বারান্ডায় ও মাঠে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে! মাজিস্ট্রেট সাহেব গম্ভীর মাত্তি ধারণ করিয়া বসিয়াছেন, তাঁহার পাশ্বে পুলিশ সাহেব বসিয়াছেন, তিনি মকদ্দমা চালাইতে আসিয়াছেন। কোট বাবা কনস্টবল সহ বৰ্ত্তমান, আমলা কেরাণী আজ কাজকর্ম ফেলিয়া এই বৃহৎ মকদ্দমা দেখিতে আসিয়াছে! উকিল মহাশয়দের মধ্যে কেহ বাকী নাই। মাজিস্ট্রেট সাহেবের আদেশ অনুসারে উকিল সরকারমহাশয় এই মকদ্দমা চালাইবার জন্য উপস্থিত। তাঁহার বিজ্ঞ আকৃতি ও বিজ্ঞ প্রকৃতি বদ্ধমানে কে না জানে, তাঁহার সাক্ষর শরীর ও সক্ষম বৃদ্ধি বদ্ধমানে কাহার অপরিচিত ? তাঁহার নিকট গম্ভীরাকৃতি উমাপ্রসন্নবাব আসীন রহিয়াছেন—বদ্ধমান জেলায় উমাপ্রসন্নবাবর ন্যায় কাহার যশ, কাহার নাম, কাহার অভিজ্ঞতা ? লক্ষয়ী তাঁহার প্রতি সদয়, সরস্বতী তাঁহার কণ্ঠে বাস করেন, মান-মৰ্য্যাদা, বিদ্যা, ধন, গৌরব, সকল বিষয়েই উমাপ্রসন্নবাব ভাগ্যবান। উমাপ্রসন্নবাবরে সমকক্ষ হওয়া উকিলদিগের উচ্চাভিলাষ, উমাপ্রসন্নবাবকে নিযুক্ত করা ধনী জমিদারদিগের আকাঙ্ক্ষা, উমাপ্রসন্নবাবর ন্যায় বড়লোক হওয়া বদ্ধমানের বিদ্যালয়ের বালকদিগের বাল্যস্বপ্ন ! তাঁহার পাশ্বে ক্ষীণশরীর সাক্ষাবৃদ্ধি চতুর পদ্মলোচনবাব বসিয়াছেন—কাৰ্য্যদক্ষতায় বল, ক্ষমতায় বল, সাহেবদিগের নিকট মান-মৰ্য্যাদায় বল, গবর্ণমেণ্টের নিকট সনামে বল,— পদ্মলোচনবাবরে ন্যায় বদ্ধমানে কে আছে ? বদ্ধমান সহরের লোক তাঁহার আদেশ শিরোভূষণ করিয়া মানে, পল্লীগ্রামের লোকে তাঁহার অনুগ্রহ অপেক্ষা করে ! তাঁহার নিকট প্রবীণ, বৃদ্ধিমান, অমায়িক, মিস্টভাষী শ্যামলালবাব; শ্যামলালবাব সকলের প্রিয়, যে তাঁহাকে জানে সে তাঁহাকে আদর করে, তাঁহাকে ভালবাসে, তাঁহার প্রিয় কথায় তুষ্ট হয়, তাঁহার সৎপরামশে উপকৃত হয়। তাঁহার পাশ্বে”—আর কত নাম করিব ? পদ্মসরোবরের ন্যায় আজ বিচারগাহ শোভা পাইতেছে,—শামলা-পরিধায়ী উকিল মহাশয়গণ যেন পদ্মফল ফুটিয়া রহিয়াছেন। রমাপ্রসাদের দীঘ"-জটাচ্ছাদিত তীর নয়ন দেখিয়া লোকে আরও বিস্মিত হইল। যাঁহার শাস্ত্র-শিক্ষা অসাধারণ, বেদ-বেদান্ত যাঁহার কন্ঠস্থ, সরস্বতী যাঁহার ওঠে বাস করেন, যিনি কাশী বান্দাবন পৰ্য্যটন করিয়াছেন, যিনি প্রায় পঞ্চাশত বৎসর বয়ঃক্রমেও দৈববল ধারণ করেন, যিনি জীবনের শেষাবস্থা ধৰ্ম্মশিক্ষা দানে অতিবাহিত করিতেছেন, সেই প্রাচীন ঋষিতুল্য মনুষ্য কি তারিণীবাবরে হত্যাকারী ? এই প্রশান্ত দেবতুল্য ললাটে কি হত্যাকারী শব্দ অঙ্কিত আছে ? বড় বড় উকিল সমস্ত বাদীর পক্ষে-আসামীর পক্ষে সেই ক্ষুদ্রকায় ক্ষীণজীবী মোক্তার। তিনি মাজিস্ট্রেটের ভাবগতিক দেখিয়া, অনেক কন্টে একখানি দরখাস্ত দাখিল করিলেন। দরখাস্ত এই যে মাজিস্ট্রেট সাহেব স্বয়ং তারিণীবাবকে জানিতেন, সনাতনবাটীর জমিদার কামিনীকান্তবাবকেও জানেন। তারিণীবাবর বিধবা ও কামিনীকান্তবাব এই মকদ্দমায় প্রকৃত বাদী। অতএব মকদ্দমাটী মাজিস্ট্রেট সাহেব নিজে বিচার না করিয়া অন্য বিচারকের হস্তে দিলে 8૧૮. .