পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* তিনি প্রকাশ করিলেন-রমাপ্রসাদ কয়েক মাস অবধি সনাতনবাটীতে বাস করিতেছেন, জমিদারমহাশয় ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে বাহির করিয়া দিবার আদেশ করিয়াছিলেন। তাহার পর রমাপ্রসাদ জমিদারকে ভয় প্রদর্শন করেন, তাহাতে কামিনীবাব কয়েকজন বিশ্বন্ত বন্ধকে ডাকিয়া শপথ করিয়া বলেন,—যদি রমাপ্রসাদকে উৎসন্ন না করি, তাহা হইলে আমি নিজে দেশত্যাগ করিব। তারিণীবাব মৃত্যুর কয়েকমাস পাব হইতে তাঁহার নতন গহিণীর সহিত বড় কথা কহিতেন না, কেবল তাঁহার মৃত পত্নীর কথা ভাবিতেন, বিন্দ ও সাধার কথা ভাবিতেন, এবং চক্ষর জল ফেলিতেন। তারিণীবাব আমাকে ডাকাইয়া অনেকবার বলেন-বিষয় আমার ভ্রাতৃকন্যাদেরই দিব, গহিণীকে দিব না। হেমচন্দ্র এ কথা শুনিয়া তারিণীবাবকে স্পষ্টই বলিতেন,—আপনার সন্ত্রী বৰ্ত্তমান থাকিতে এ বিষয় আমরা লইব না। শরৎ মৈমনসিংহ যাইবার আগে তারিণীবাবকে বলিয়া গেলেন,—আপনার বিষয় জ্যেঠাইমাকেই দিন, আমরা লইতে স্বীকৃত হইব না। তথাপি বন্ধের মন ফিরিল না, মৃত্যুর পবেসিন্ধ্যায় উইল করিয়া বিন্দ, ও সন্ধাকে সমস্ত সম্পত্তি দিয়াছেন, রমাপ্রসাদ ঠাকুর এবং আমি সে উইলের সাক্ষী। তারিণীবাবর মৃত্যুর পর তাঁহার বিধবা সনাতনবাটীতে আসিয়া অবস্থান করেন। যখন গোপবালা স্বামীর • সনাতনবাটীর পুরাতন একজন দাসী (সে যোগমায়াকে বাল্যকাল হইতে যত্ন করিত) আসিয়া প্রকাশ করিল,-আমি ৪০ বৎসর ঐ বাটীতে আছি, ৩০ বৎসর পর্বে রমণীকান্ত নামে নাবালক জমিদার বাস করিতেন, কামিনীকান্তের সহিত হাঙ্গামায় তাঁহার কাল হয়। সে কথা সকলে প্রায় ভুলিয়া গিয়াছে, কিন্তু সন্ন্যাসী ঠাকুর সেই কথার উল্লেখ করিয়া কামিনীকান্তের গহিণীকে ভয় প্রদর্শন করিয়াছিলেন, তাহা আমি আপন কণে শনিয়াছি। সেই অবধি জমিদারবাব সন্ন্যাসী ঠাকুরকে বড় যত্ন করিতেন, অচিরে কলিকাতায় চলিয়া গেলেন। ধনপরের ধনঞ্জয়বাব তাঁহার পর উপস্থিত হইলেন, তাঁহাকে দেখিয়া কামিনীকান্তবাব চমকিত হইলেন। তিনি বলিলেন,–তারিণীবাব আমার শ্বশরে হইতেন, মৃত্যুর কয়েকমাস পবে আমি একবার তারিণীবাবকে দেখিতে আসিয়াছিলাম। তারিণীবাবর সাধনী পতিপ্রাণা প্রথম স্ত্রী শোকে ও রোগে প্রাণত্যাগ করেন, তারিণীবাবরে দ্বিতীয়া সত্ৰী অতিশয় প্রখরা ও উদ্ধতস্বভাবা, তারিণীবাবকে জবালাতন করিয়া সমস্ত সম্পত্তি উইল করিয়া লইয়াছিলেন। তারিণীবাবরে মৃত্যুর পর কামিনীকান্তবাব কলিকাতায় সন্মতিবাবর নিকট গিয়াছিলেন, সেদিন সে সময়ে আমিও সন্মতিবাবর বাটীতে ছিলাম। কামিনীবাব বলিলেন যে রমাপ্রসাদ সরস্বতী একটী হাঙ্গামার মকদ্দমার কথা উত্থাপন করিয়া কামিনীবাবকে শাসন করিয়াছেন, এবং তারিণীবাবরে নিকট নতন উইল করিয়া লইয়া বিষয় তাঁহার ভ্রাতৃকন্যাদিগকে দেওয়াইয়াছেন। এই সকল কারণে কামিনীবাব তারিণীবাবরে বিধবাকে দিয়া রমাপ্রসাদের নামে একটী খননের মকদ্দমা স্থাপন করিয়াছেন, প্রকাশ করিলেন ! ধনঞ্জয়বাব আরও বলিলেন, আমি শ্বশুরের বিষয় পাইতে এক সময় লর্ধে ছিলাম, এখন আর নাই। আমি নিজের দোষে বিপুল সম্পত্তি হারাইয়াছি, পতিব্ৰতা, সাধনী, স্নেহময়ী সন্ত্রী (তিনি হেমবাবর ভগিনী হইতেন), তাঁহাকেও হারাইয়াছি। সে সময়ে হেমবাব আমাকে অনেক সৎপরামর্শ দিয়াছিলেন, হেমবাবার স্ত্রী আমাদের বাড়ী আসিয়া অনেক উপকার করিয়াছিলেন, কিন্তু নিজের দোষে আমি সে পরামর্শ গ্রহণ করি নাই। হেমচন্দ্র ও শরচ্চন্দ্র তারিণীবাবরে বিষয় পাইয়াছেন শুনিয়া তুষ্ট হইয়াছি,— আমার অধিক দিন বাঁচিবার নাই, আর একটী সম্পত্তি লাভ করিয়া অপব্যয় করিবার ইচ্ছাও নাই। বাল্যকাল হইতে সরোপান শিখিয়াছি—তাহাতেই শীঘ্ন আমার মৃত্যু হইবে, আমার পাপের প্রায়শিচত্ত হইবে। সুতু:সুনশীল দলে তেল আলি মাজিষ্ট্রেট সাহেবের হৃদয়ও দ্রবীভূত | তাহার পর খোজেস্তা বিবি নৰ্ত্তকী ! তাহাকে দেখিবামার কামিনীবাবরে প্রাণ উড়িয়া গেল, কাছারীর লোক একেবারে ঝাঁকিয়া আসিল! সে প্রকাশ করিল যে আমি কলিকাতার একজন নত্তকী। কামিনীবাব বাই-নাটপ্রিয়, বাই-নাচ দেখিবার জন্য আমাকে সব্বদা ডাকিয়া পাঠান। সম্প্রতি কামিনীবাবরে বাগানে একদিন ডাকাইয়াছিলেন, তথায় সন্মতিবাব ছিলেন। তাহার ”م(منظ8ے