পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাৰলী দঃখিনী সে ধর্মগীতে আকৃষ্ট হইয়া পাশ্বের ঘরে বসিয়া শুনিতে লাগিলেন, এবং এক একবার সেই পণ্য দেবতুল্য মত্তির দিকে দেখিতে লাগিলেন। সন্ন্যাসীর গম্ভীরস্বরে শাস্ত্রপাঠ শনিয়া, সন্ন্যাসীর প্রশান্ত উক্তজবল মাত্তি দেখিয়া, যোগমায়ার ছেলেবেলাকার কথা এক একবার মনে পড়িতে লাগিল—কেন তাহা যোগমায়া জানেন না। রাত্রি দুই প্রহর হইল, সন্ন্যাসী দীপ নিব্বাণ করিয়া শয়ন করিলেন, যোগমায়া পত্ৰবৰ্তমতিদ্বারা ব্যাকুল ও ব্যথিত হইয়া বিধবার নিরানন্দ শয্যায় শয়ন করিলেন। নিদ্রা হইল না! বার বার বাল্যকালের কথা মনে আসিতে লাগিল, বার বার যৌবনের হৃদয়েশ্বরকে মনে পড়িতে লাগিল, বার বার সেই নব বৈধব্যের অসহ্য বেদনা সপ্তবিংশ বৎসর পর বিধবার হৃদয় আবার মন্থন করিতে লাগিল। বালিশে মুখ ঢাকিয়া নীরবে কাঁদিয়া অভাগিনী নিদ্রা যাইল। নিদ্রা স্বপ্নপণ –বোধ হইল যেন, ছাদের উপর হইতে তাঁহার যৌবনের স্বামী সেই তেজঃপণে রমণীকান্ত উন্নতস্বরে গীত গাইতেছেন। চমকিত হইয়া হতভাগিনী উঠিল,—প্রাতঃকাল হইয়াছে, সযকিরণে ব্যক্ষ, তড়াগ ও শস্যক্ষেত্র রঞ্জিত সুতু র ল ফালকে দণ্ডায়মান হইয়া উন্নতস্বরে সরস্বতী ঠাকুর বেদগান 顯 | তাহার পর ?—তাহার পর দিন দিন যখন সন্ন্যাসীর ঘর ঝাঁট দিতে আসিতেন, প্রাতঃকালে বা অপরাহুে ফলমলোদি লইয়া আসিতেন, সন্ধ্যার সময় প্রদীপ জালিয়া আনিতেন—যোগমায়ার শাস্তহৃদয় উদ্বিগ্ন হইত, যোগমায়ার শাস্তচিত্ত অশেষ চিন্তাতরঙ্গে আপ্লুত হইত! আর যখন সরস্বতী ঠাকুর প্রাতঃকালে উন্নতস্বরে শিষ্যদিগের নিকট উপনিষদ পাঠ করি তন, অথবা দ্বিপ্রহর নিশি পৰ্য্যন্ত একাকী দীপালোকে বসিয়া সঙ্গীতপণে স্বরে মহাভারত ও পরাণ পাঠ সেই অমতবচন শ্রবণ করিতেন ! তাঁহার জীবন আনন্দপণ হইত, হৃদয় শান্তিপণ হইত। শন্যহৃদয়ে নিজ আবাসে ফিরিয়া যাইতেন ! এ কি যৌবনের উদ্বেগ ? যোগমায়ার যৌবন ত অনেক দিন পার হইয়া গিয়াছে। এ কি নতন প্রণয়ের উদ্রেক ? যোগমায়ার হৃদয় ত প্রণয়ের আকাঙ্ক্ষা অনেক দিন ভুলিয়াছে। তথাপি সন্ন্যাসীর সেই প্রশান্ত মুখমন্ডলের দিকে দেখিলেই যোগমায়ার যেন পৰবৰ্তমতি উদয় হইত, হৃদয় বিলোড়িত হইত, মন নানারপে চিন্তা বা কল্পনা বা সবপ্নে ভাসিয়া যাইত ! যেদিন সরস্বতী ঠাকুর আপন জীবন-ইতিহাস হেমচন্দ্র ও শরচ্চন্দ্রকে বলেন, সেদিন যোগমায়ার হৃদয় নানা চিন্তায় একেবারে ব্যাকুল ও বিপৰ্য্যন্ত হইল। সরস্বতী ঠাকুর ধনীর সন্তান ছিলেন ? সরস্বতী ঠাকুর অস্টাদশ বৎসর বয়সে একটী সঙ্কটে পড়িয়া সব্বাস্তব হারাইয়াছেন ? সরস্বতী ঠাকুর পশ্চিম হইতে পুনরায় সনাতনবাটীতে ফিরিয়া আসিয়াছেন ? সরস্বতী ঠাকুর কি— ? বিধাতা, রক্ষা করন ! আমি যেন ব্যথা লোভে লন্ধ না হই, আমি যেন পাপ-মোহে মন্ধে না হই, আমি যেন পাগলিনী না হই! কয়েকদিন ধরিয়া যোগমায়া ব্যাকুলচিত্তা হইয়া রহিলেন, পর্বোসমতি ও নব অপরিস্ফুট আশাতে সে শকে হৃদয় উথলিতে লাগিল। পরে যেদিন সরস্বতী ঠাকুর যোগমায়ার নিকট যোগমায়ার স্বামীর কথা ও সম্পত্তির কথা উত্থাপন করেন, ও কামিনীকান্তের গহিণীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া রমণীকান্তের কথা উত্থাপন করেন,—তখন যোগমায়ার মনে আর সন্দেহ রহিল না। ইচ্ছা হইল, তৎক্ষণাৎ স্বামীর চরণে আছাড় খাইয়া পড়িয়া তখনই সে প্রিয় চরণ দুইটী জড়াইয়া ধরে । কিন্তু স্বামী কি তাহাতে সস্তুটি হইবেন ? স্বামী কি তাঁহাকে গ্রহণ করিবেন ? স্বামী ত এতদিন অবধি তাঁহাকে সত্ৰী বলিয়া গ্রহণ করিলেন না, সে বিষয়ে পরিচয়ও দিলেন না—সন্ত্রীর কি সে পরিচয় প্রথমে দেওয়া ভাল ? নানা চিন্তায় অভিভূত হইয়া যোগমায়া সেদিন রাত্রিতে জল গ্রহণ না করিয়া শুইলেন। রাত্ৰিতে ঘমে হইল না। নানা কথা মনে উদয় হইতে লাগিল, সন্ন্যাসীর অবয়ব, সন্ন্যাসীর বেদপাঠ, সন্ন্যাসীর ঝলিটী মনে পড়িতে লাগিল, সন্ন্যাসীর ঝুলির ভিতর একটী ছোট বাক্স আছে তাহা মনে পড়িতে লাগিল। বক্সের চবিটী বালিসের নীচে রাখিয়া সন্ন্যাসী নিদ্ৰা বন তাহা যোগমায়া দেখিয়াছেন। মনে হইল,-বাক্সে কি আছে ? বাক্সটা একবার খলিয়া দেখিব ? তাঁহার বাক্স আমি খলিব, ইহাতে কি দোষ আছে ? 8げげ