পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नमःखr দ্বিপ্রহর রাত্রির সময় দীপ হস্তে করিয়া ষোগমায়া সন্ন্যাসীর ঘরে যাইলেন, বালিসের নীচে চক্ষা দিয়া ঝর ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল। রমণীকান্ত বিবাহের পর মাতার একগাছি দড়ীহার বধকে দিয়াছিলেন, যোগমায়া স্বামীর প্রথম উপহারটা হৃদয়ে করিয়া লইয়াছিলেন । কাহারও কাছে রাখিতে বিশ্বাস হয় না বলিয়া স্বামীর কাছেই সে ধন গচ্ছিত রাখিয়াছিলেন,— আজ সপ্তবিংশ বৎসর পর সেই গচ্ছিত ধনটী স্বামীর বাক্সে দেখিলেন। ইতিমধ্যে রমণীবাব আহত হইয়া দেশত্যাগী হইয়াছেন, দেশে-বিদেশে ভিক্ষা করিয়া খাইয়াছেন, অন্য দার পরিগ্রহ করিয়াছেন, কিন্তু যোগমায়ার হারটী হস্তান্তর করেন নাই, যোগমায়ার গচ্ছিত ধন লোকসান করেন নাই। “প্ৰভু ! তুমি ধৰ্ম্মপরায়ণ, তাই অভাগিনীর গচ্ছিত ধনটী যত্ন করিয়া রাখিয়াছ ! আর একটী ধনও তোমার নিকট গচ্ছিত রাখিয়াছিলাম,--সেটী আমাদের প্রথম ভালবাসা ! যেদিন সময় পাইব, যেদিন তুমি অনুমতি দিবে, সেদিন সে ধনটীও দাবি করিব।” সমস্ত রাত্রি সেই হারটী বয়কে করিয়া যোগমায়া সেই ঘরে বসিয়া কাঁদিলেন, পরে হার পনরায় বাক্সে রাখিয়া চাবি বালিসের নীচে রাখিয়া, আপন কক্ষে শয়ন করিতে গেলেন। রমাপ্রসাদ বা রমণীকান্ত ভাবগতিক দেখিয়া বুঝিলেন, তাঁহার পতিপরায়ণা হতভাগিনী সন্ত্রী হৃদয়েশ্বরকে ভুলে নাই—সন্ন্যাসীর বেশে বা জটাভারে পতিব্ৰতা রমণীর চক্ষ প্রতারিত হয় না-যোগমায়ার নিকট আর গোপন থাকিবার চেষ্টা বিড়ম্বনা মাত্র। সুতরাং একদিন সন্ধ্যার সময় যোগমায়াকে গোপনে সমস্ত কথা বলিলেন, সপ্তবিংশ বৎসর পর যৌবনের প্রণয়িনীকে হৃদয়ে ধরিয়া অশ্রদ্বষণ করিলেন, সযত্নে যোগমায়ার আশ্রমোচন করিয়া সেই শকে ওঠে চুম্বন করিলেন। পরে অতিশয় গম্ভীরস্বরে বলিলেন,—যোগমায়া! ভগবানের প্রসাদে আমরা আর একদিন পরস্পরের মনের কথা খুলিয়া বলিব, বহুবৎসর পর যৌবনের প্রণয়ের কথা স্মরণ করিব,—এখন এই পৰ্য্যন্ত। যতদিন আমি নিজ নামে প্রকাশ না হই, ততদিন, আমি সন্ন্যাসী মাত্র, তুমি জমিদার-গহের বিধবা। ইতিমধ্যে লোকে আমাদের জানিতে পারলে আমাদের প্রাণের সংশয় আছে,—কামিনীকান্তবাবকে আমি জানি! সাবধান! যোগমায়া আকাশের চন্দ্র হাতে পাইলেন, কিন্তু সে চন্দ্র আবার মেঘাবত হইল! মকদ্দমার তদন্ত ও বিচারের কয়েকদিন যোগমায়া জীবন্মত হইয়া ছিলেন, শেষে যাতনা অার সহ্য করিতে না পারিয়া তালপুকুরে আসিয়া বিন্দবাসিনীর কাছে কাঁদিয়া পড়িলেন, এবং তাঁহাকে লইয়া বদ্ধমানে আসিলেন। হইতেছে, পথে, ঘাটে জয়ধনি পড়িতেছে । যোগমায়ার নারীহৃদয় বুঝি আনন্দের উদ্বেগে ফাটিয়া যায়, যোগমায়া অস্থির হইয়া প্রতীক্ষা করিতেছেন । যখন রমণীকান্ত কাছারী হইতে মোক্তারের বাড়ীতে আসিলেন, যখন বাড়ীর ভিতরের উঠানে পদক্ষেপ করিলেন—যোগমায়া আর সবরণ করিতে না পারিয়া আছাড় খাইয়া পড়িয়া স্বামীর প্রিয় চরণ দুইটী জড়াইয়া ধরিলেন । একবার উচ্চৈঃস্বরে প্রাণ ভরিয়া রোদন করিয়া হৃদয়ের বেগ প্রকাশ করিলেন, সপ্তবিংশ বৎসরের জনালা-যন্ত্রণা ভুলিলেন। হৃদয় আলোড়িত হইল, সকলের চক্ষতে জল আসিল । সন্ধা ঘরের ভিতর গিয়া খোকাকে চুম্বন করিয়া কাঁদিলেন, বিন্দ স্বামীর হাত ধরিয়া অঞ্চল দিয়া চক্ষ মছিলেন, বাহিরে চন্দ্রনাথবাবাও হস্তে ললাট স্থাপন করিলেন, চক্ষ হইতে দই বিন্দ আশ্রম বহিয়া পড়িল। মোক্তার মহাশয় ও তাঁহার গহিণী প্রাচীন কালের লোক-তাঁহারা দই বাহ তুলিয়া ভগবানকে ডাকিয়া রমণীকান্ত ও যোগমায়াকে আশীৰ্বাদ করিলেন। অনেক চেষ্টার পর রমণীকান্ত যোগমায়ার হাত ধরিয়া উঠাইলেন, চক্ষর জল মছাইয়া দিলেন, আপনার চক্ষর জল মছিলেন। কথা কহিতে পারিলেন না—নীরবে যোগমায়ার পরাতন দড়ীহারটী যোগমায়ার গলায় পরাইয়া দিলেন। Btఫి.