পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী কুসুমকুমারী দাঁতে মিশি দিতে দিতে বলিলেন,—ও লো, কপালজোর মিনষের ! যোগমায়াদিদির কালোপেড়ে কাপড় পরে গায়ে গয়না দিয়ে কেমন রপে বেরিয়েছে দেখিছিস ? ঠিক যেন রাঙ্গা বেটী বন্ধ মান থেকে ঘরে আসিল ! বসন্তকুমারী আলতা-মাখা রাঙ্গা চরণ ধাইতে ধাইতে বলিলেন,—ও লো, যোগমায়াদিদি রাঙ্গা বেী হবে কেন ? রাঙ্গা বোঁ যে ঘরে আসছে। হেমকুমারী কলসী নামাইয়া কাকপক্ষ-বিনিন্দিত নিবিড় কৃষ্ণ কেশরাশির বিউনি খলিতে খলিতে বলিলেন,–হাঁ, হাঁ, শুনিলাম যে রমণীবাবরে ছেলের সঙ্গে তালপুকুরের হেমবাবর মেয়ের বিয়ের সম্মবন্ধ হয়েছে! গুরবিণী বর্ণকুমারী পদ্ধায় তাবিজ-বাঁধা হাত নাড়িয়া বলিলেন,—দর পোড়াকপালী ! তাও কি হয় লো ? আমরা যে বামণে লো, আমরা যে দেবী লো! আমাদের সঙ্গে কি কায়েতের বিয়ে কখন হয় ? ř2 রমণীকান্ত গ্রামে আসিয়া গ্রামের ইতর ভদ্র সকলকে বস্ত্র, মিস্টান্ন ও নানারপে উপহার বিতরণ করিলেন; যোগমায়া জমিদার-গহের বেী, ঝি, প্রাচীনা, নবীনা, সকলকে সমান সম্মান করিয়া বস্ত্র ও অলঙ্কার বিতরণ করিলেন । গ্রামে নতেন জমিদারের জয়-জয়কার হইতে লাগিল, জমিদার-গহে ও পুকুরঘাটেও যোগমায়ার চরিত্র সমালোচনা কিছুদিন স্থগিত রহিল! প্রাচীনাগণ নতেন তসর ও গরদের কাপড় পড়িয়া অনুগ্রহ করিয়া বলিলেন,--না, বাছা যোগমায়ার মায়াদয়া আছে, আমাদের জন্য একটু ভক্তি আছে, তা ত চিরকালই বলেছি। তবে কপাল মন্দ, তাই একটা ইতর জাতির সতিন হয়েছিল, তারই ছেলেটাকে কায়েতের ঘরে বিয়ে দিতেছে ; নিতান্ত ভাঙ্গা কপাল, নৈলে কি বামণের ঘরের বৌ হইয়া কায়েতের সঙ্গে সম্প্রবন্ধ করে ? গ্রামের পণ্ডিতাভিমানী শাস্ত্রজ্ঞগণ দলবদ্ধ হইয়া একদিন রমণীবাবরে নিকট গিয়া এরপ গহিত সম্প্রবন্ধ করিতে নিষেধ করিলেন, সমাজের আদেশ লইয়া শাস্ত্রসম্মত কাজ করা ভাল, এইরুপ নানা তক করিলেন। রমণীবাব হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,—কাহার আদেশ লইব ? দেশের রাজা ভিন্নধৰ্ম্মী, তাঁহারা শাস্ত্রকথা জানেন না। আপনারা শাস্ত্রকথা জানেন, কিন্তু নিজের প্রভুত্বটী বজায় রাখিবার জন্য অন্যরােপ ব্যবস্থা দান করেন। সেই জন্যই লোকে সে ব্যবস্থা তুচ্ছ করিয়া নিজের ধৰ্ম্মজ্ঞান অনুসারে সমাজের উন্নতিসাধন করিতেছে। লোকে এক্ষণে জাহাজে করিয়া শ্ৰীক্ষেত্র, চট্টগ্রাম, মাদ্রাজ, বোম্বাই প্রভৃতি স্থানে যাইতেছে, সে বিষয়ে আপনারা ব্যবস্থা দিয়াছিলেন কি ? লোকে এক্ষণে নানাজাতি একত্র হইয়া বিদ্যালয়ে একত্র পাঠ করিতেছে, সংসারে একত্র ব্যবসা করিতেছে, অনেক স্থলে একত্র আহারাদি করিতেছে, সে বিষয়ে আপনারা ব্যবস্থা দিয়াছিলেন কি ? লোকে এক্ষণে বহুবিবাহ ত্যাগ করিতেছে, বাল্যবিবাহ ত্যাগ করিতেছে, সন্ত্ৰণীদিগকে শিক্ষা দিতেছে. বালবিধবাদিগের বিবাহ দিতেছে, সে বিষয়ে আপনারা ব্যবস্থা দিয়াছিলেন কি ? লোকে এক্ষণে নানাজাতি একত্র হইয়া রাজনৈতিক উন্নতিসাধন করিতেছে, জাতীয় ঐক্যসাধন করিতেছে, সে বিষয়ে আপনারা ব্যবস্থা দিয়াছিলেন কি ? লোকে এক্ষণে জগৎ পরিক্রমণ করিয়া বিদ্যালাভ করিতেছে, বহুদশ্যিতা লাভ করিতেছে, সে বিষয়ে আপনারা ব্যবস্থা দিয়াছিলেন কি ? প্রিয় বন্ধগণ! ধৰ্ম্মই মনষ্যের প্রকৃত বন্ধন, ধৰ্ম্মই উন্নতির প্রধান উপায়। আপনারা যদি ধমের দিকে দটি রাখিয়া, প্রাচীন শাস্ত্রের দিকে দটি রাখিয়া ব্যবস্থা দিতেন, তাহা হইলে সমাজের উন্নতিসাধন করিতে পারিতেন। আর যদি কেবল নিজের সবাথের দিকে দটি রাখিয়া ব্যবস্থা দেন, তাহা হইলে সে ব্যবস্থা তুচ্ছ করিয়া হিন্দুসমাজ আপনার উন্নতির পথ পরিস্কার করিবে ! পণ্ডিতমহাশয়গণ! প্রকৃত ধৰ্ম্ম একটু আলোচনা করিবেন, প্রাচীন শাস্ত্র একটা দেখিবেন, বেদাদি একট পাঠ করবেন, শাস্ত্রে বলে, বেদাদি পাঠ না করিয়া ব্যবস্থা দান করিলে তাহাতে পাপ হয়—দেশের সব্বনাশ হয়।* ব্রাহ্মণ পন্ডিতগণ বিদায় হইলে কলিকাতা হইতে কামিনীকান্তবাবরে প্রেরিত কয়েকজন মহাসম্প্রান্ত পরামর্শদাতা আসিয়া কামিনীকাস্তবাবরে নামে এ বিবাহ নিষেধ করিতে বসিলেন। কামিনীবাব বলিয়া পাঠাইয়াছেন,—আমাদের মধ্যে যাহা হইয়াছে, এখন আর বিবাদ-বিসম্বাদ নাই, এক্ষণে রমণীবাব যেন এরপে অধৰ্ম্মাচরণ করিয়া বংশে কলঙ্ক না আনেন। রমণীকান্ত বশিষ্ঠ ধৰ্ম্মসন্ত্র ৩ । ৬, ১২ ৷ 8Ꮌ &