পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ USS) “আয় ম', কোলে আয়” বলিয়া আলিঙ্গন করিতে পারিতেন, আজ যদি লক্ষ্মীস্বরূপ। দোঁহী স্বশীলাকে বুকে লইয়া একবার সাশ্রজলে আশীৰ্ব্বাদ করিতে পারিতেন, আজি যদি মাতার পুণ্যবলে কন্যাদিগের সৌভাগ্যের উদয় দেখিতে পাইতেন, আজি যদি বিন্দুর সংসারে ఫీ হইয়। সকলকে আশীৰ্ব্বাদ কবিতে পারিতেন, তাহা হইলে বিন্দুর বন্দুর সংসার কি জ্যোতিঃপূর্ণ হুইত ! লোকপূর্ণ প্রাঙ্গণ হইতে সরিয়া গিয়া নীরবে বিন্দুবাসিনী একবিন্দু অশ্রুবর্ষণ করিলেন, নীরবে আকাশের দিকে চাহিয়া স্বৰ্গীয় মাতার জ্যোতিৰ্ম্ময় রূপ অনুভব করিয়া একটী প্রণাম করিলেন ; এবং আশীৰ্ব্বাদ প্রার্থনা করিলেন । বিবাহের দিন শোকের দিন সজোরে বাদ্য করিয়া উঠিল, বাহিরবাটী ঘর কি আনন্দপূর্ণ হইত, হইতে কন্যাযাত্রদিগের ঘন ঘন সানন্দ হাস্যরব শদিত হইতে লাগিল। সেই কন্যাযাত্রদিগের মধ্যে হেমচন্দ্ৰ আজি গান্তহৃদয়, প্রফুল্লমনা, সহাস্তবদন ! লোকে তাহাকে অনেক নিন্দ করিয়াছে, বিধবা খালীর বিবাহ দেওয়ায় একঘরে করিয়াছে, কিন্তু তাঙ্গার দেবতুল্য চরিত্র দেখিয় সকলেই শ্রদ্ধা, ভক্তি ও মাত্ম করে। সচরাচর যে গুণগুলিদ্বার লোকে “বড়লোক” হয, হেমচন্দ্রের তাহার o হেমচন্দ্রের ধন নাই, জমীদারী নাই, বিশেষ বিদ্যা নাই, জগৎ-সংসারে নাম নাই, রাজদত্ত উপাধি নাই, কোনও বিষয়ে অধিক গৌরব নাই। তথাপি সেই সামান্ত দরিদ্র পল্লীবাসীর হৃদয়ের সাঙ্গ, নিভীকতা ও পবিত্রত দেখিয়া শরচ্চন্দ্র ও রমণীকান্ত আকৃষ্ট হইয়াছেন, তাহার কর্তব্যসাধনে ဂြို့ ও প্রতিজ্ঞ দেখিয়া পল্লীগ্রামবাসী ও নগরবাসিগণ চমৎকৃত হইয়াছেন! দরিদ্র্যে, শোকে, রোগে মহামনা হেমচন্দ্রের মন একদিন ও টলে নাই ; নিন্দ, ভৎসিন ও অপবাদে, একদিনের জন্য কৰ্ত্তব্যসাধনের পথ হইতে - তাহার পদস্থলিত হয় নাই, অবনতির সময় বা উন্নতির সময় তাহার হৃদয় এক মুহূর্তের জন্য বিচলিত হয় নাই ! এরূপ পুরুষসিংহের নিকট ধন কি ছার, মান-গৌরব কি ছাঁর । লক্ষ্মী স্বয়ং এরূপ সাহস ও নির্ভীকতায় বশীভূত হইয়া এরূপ লোকের দিকে আকৃষ্ট হয়েন। সনাতনবাটীর জমীদার আজি দরিদ্র হেমচন্দ্রের সহিত কুটুম্বিত স্বীকার করিয়া আপনাকে সম্মানিত জ্ঞান করিতেছেন, দরিদ্র হেমচন্দ্রের নাম আজি পথে-ঘাটে, ধাৰ্ম্মিক লোক মাত্রে উচ্চারণ করিতেছেন । দেখিতে দেখিতে নৈশ আকাশে আলোক দেখা দিল, মহাকোলাহল গগনমার্গে উখিত হইল,—ঐ বরযাত্র সমারোহে আসিতেছে। সকলে শশব্যস্ত হইয়া বরযাত্রদিগকে আহবান করিল, হেমচন্দ্র শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে মহাসম্রাস্ত জমীদার রমণীকান্তবাবুকে আলিঙ্গন করিলেন। বিস্তীর্ণ বিবাহসভা প্রস্তুত হইয়াছে। উপরে চন্দ্ৰাতপ ঝলমল করিতেছে, চন্দ্ৰাতপ হইতে অনেকগুলি ঝাড় দিবার ন্যায় আলোক বর্ষণ করিতেছে, চারিদিকে ভূত্য ও অহচরগণ বসন্ত রঙ্গের কাপড় পরিয়া ঘন ঘন পাখা করিতেছে, মালীগণ হুপাকারে পৃপ সাজাইয়া দিয়াছে, গ্রামের বালকগণ কন্যাযাত্র ও বরযাত্রের গায়ে গোলাপ বর্ষণ করিতেছে, গায়কগণ সঙ্গীতে সে সভা পূর্ণ করিতেছে, এবং কখন কখনঃদুর হইতে প্রজাদিগের জয় জয় শব্দ গগনে উখিত হইতেছে। এই সভার মধ্যে, রক্তবর্ণ বস্ত্রের