পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরেষের কদাচিৎ দেখা যায়, পত্রীলোকের কখনই সম্ভবে না। নয়নের স্থির উজৰলতা, ওঠের , সমস্ত বদনের উন্নত, গম্ভীর ভাব, হৃদয়ের মহত্ত্ব প্রকাশ করিতেছে; সমস্ত অৰয়বের ভাবভঙ্গী দেখিলে হঠাৎ প্রতীয়মান হয় যে, এ তীক্ষ জ্যোতিময়ী তলবঙ্গী মানুষী নহেন,— কোন যোগপরায়ণা সবগবাসিনী মানবজাতির উন্নতি সাধনাথ এই মত্ত্য জগতে অবতীণা হইয়াছেন । সেই নিস্তন্ধ সায়ংকালে গবাক্ষপাশ্বে বসিয়া রমণী সেই সন্দের নিমল আকাশপথ নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। রমণীর বদনমণ্ডলও অপরাপ সন্দের ও নিৰ্ম্মল। রজনী গভীর হইতে লাগিল; আকাশের বিস্তীর্ণ নীলবর্ণ ক্রমে ঘোরতর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইতে লাগিল; রমণীর হৃদয়েও যেন চিস্তারজনী গভীর হইতে লাগিল। তাঁহার প্রশস্ত ললাটও যেন ক্রমশঃ ঘোরতর অন্ধকারাচ্ছন্ন হইতে লাগিল; সবঙ্কিম ভ্ৰমযুগল অধিকতর কুঞ্চিত হইতে লাগিল; নয়ন হইতে তীক্ষতির উত্তজবলতর জ্যোতিঃ বহিগতি হইতে লাগিল । এই সময়ে একজন পরষে সেই গহে প্রবেশ করিয়া ডাকিলেন, “বিমলা!” বিমলা চাহিয়া দেখিলেন, তাঁহার পিতা সতীশচন্দ্র আসিয়াছেন। যে পরষ কক্ষে প্রবেশ করিলেন, তাঁহার বয়ঃক্রম পঞ্চাশৎ বর্ষ হইবে না; কিন্তু আকার দেখিলে সহসা ষটি বৎসরের বদ্ধ বলিয়া ভ্রম হয়। মস্তকের অধিকাংশ কেশ শক্লে, ললাট চিন্তারেখায় অঙ্কিত, শরীরের চক্ষম শিথিল, সব অঙ্গ ক্ষীণ, তথাপি চক্ষদ্বীয় জ্যোতিময় ও মুখমণ্ডলে চিন্তাদেবী সততই অধিষ্ঠান করিতেছেন। ধীর আচরণ, ধীর গমনাগমন, ধীর অথচ তীক্ষা বৃদ্ধিসঞ্চালন। নানারপে বহৃদরেদশিনী বহন্দ্রব্যাপিনী কলপনাতে তাঁহার জীবন ও অন্তঃকরণ চিরকালই পরিপরিত য়া রহিয়াছে। কক্ষে প্রবেশ করিয়া কন্যাকে চিন্তামগ্ন দেখিয়া ক্ষণকাল নিস্তন্ধ রহিলেন। পরে ঈষৎ হাস্যসহকারে ডাকিলেন, “বিমলা!” বিমলাও পিতাকে দেখিয়া আপন গভীর ভাবনা কিঞ্চিৎ বিস্মত হইলেন। বদনমণ্ডলে গম্ভীরভাব ক্রমে অপনীত হইয়া পবিত্র পিতৃস্নেহের আবিভাব হইল। পিতা কক্ষে আসিয়াছেন, অনবধানতা বশতঃ এতক্ষণ দেখিতে পান নাই, মনে করিয়া কিঞ্চিৎ লজিত হইলেন। সতীশচন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন,–বিমলা ! এত কি দুঃখ হইয়াছে যে, মৌনভাবে এতক্ষণ বসিয়া রহিয়াছ ? বিমলা উত্তর করিলেন,—আপনি কল্য দাগ ত্যাগ করবেন, কতদিন আপনাকে দেখিতে পাইব না, কতদিন এই প্রকাণ্ড দ্যগ শন্য থাকিবে; সে চিন্তায় আমার মন অস্থির হইয়াছে, আমি আপন মন শান্ত করিতে পারিতেছি না। পিতা উত্তর করিলেন,—সে কি বিমলা, কেন মিথ্যা ভাবনা করিতেছ? আমি শীঘ্রই ফিরিয়া আসিব ; আমি কি তোমাকে ছাড়িয়া অধিক দিন থাকিতে পারি? বিমলা। পিতা, আপনি যে আমাকে অতিশয় স্নেহ করেন তাহা জানি,—পিতা কন্যাকে ইহা অপেক্ষা অধিক স্নেহ করিতে পারে না। সতীশ । তবে চিন্তা করিতেছ কেন ? আমি ত প্রতিবৎসরই একবার রাজধানী যাইয়া থাকি, এবার তোমার বিশেষ চিন্তা কেন ? বিমলা। প্রতিবৎসর আমার এ প্রকার ভাবনা হয় না; এবার সহসা হৃদয়ে ভয় হইয়াছে, কেন জানি না। পিতা, আপনি গহে থাকুন, কোথাও যাইবেন না। শেষ কথাগুলি অতি অদ্ধাসফট মদবেরে উচ্চারিত হইল—শুনিয়া সতীশচন্দ্রের হৃদয়ও যেন আহত ও কিঞ্চিৎ ভীত হইল। ক্ষণেক নিস্তন্ধ থাকিয়া সতীশচন্দ্র বলিলেন,— .... লে নি ল জি আমাক মাজে হল বা ন লন ४3 ठा ! বিমলা উত্তর করিলেন,—পিতা, মিথ্যা ভয় নহে, কল্য রজনীযোগে আমি স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম, বোধ হইল যেন বগীয়া মাতা দেখা দিলেন, সাশ্রলোচনে যেন অতি মদবেরে বলিলেন, “মা, সাবধান ! ঘোর বিপদ সমাগত!” এখনও বোধ হইতেছে, তাঁহার শকে মুখখানি— তাঁহার অশ্রাপণে লোচন দুইটী দেখিতে পাইতেছি। কি পাপ করিয়াছি, বলিতে পারি না; কি পাপে স্নেহময়ী মাতাকে হারাইলাম, জানি না; আবার কি ঘোর বিপদ সমাগত, ভগবানই জানেন । পিতা, ক্ষমা করন। আমার ভাবনা হইতেছে, আপনি প্রস্থান করিলে আর এ আলয়ে প্রত্যাগমন করিবেন না। S R २