পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रट्धश्व ब्रक्रनाबलौ পাতালপ্রবাহিনী, ভৈরবকল্লোলিনী ভোগবতীর তরঙ্গমালার ন্যায় আমার হৃদয়কন্দরে কত প্রবত্তি প্রবাহিত হইয়াছে, কিন্তু সে প্রবাহ ভোগবতীর ন্যায় মনষ্যের অদশ্য অন্ধকারাচ্ছন্ন। “দশ বৎসর অতীত হইলে সেই অন্ধকাররাশি সহসা আলোকচ্ছটায় চমকিত ও উদীপ্ত হইল।” এই পৰ্য্যস্ত বলিয়া বক্তা ক্ষণেক নীরবে চিস্তা করিতে লাগিলেন। সরেন্দ্রনাথ নিপন্দনেত্রে সেই অপব্ব উন্মত্তপ্রায় লোকের দিকে দেখিতে লাগিলেন, অনন্যমনে তাঁহার উন্মত্ততার কথা শুনিতে লাগিলেন। তিনিও ক্ষণেক পর আরম্ভ করিলেন,— “ষে সকল প্রবত্তিতে আমার হৃদয় দশ বৎসর কাল ব্যথিতু হইয়াছিল, তাহার মধ্যে প্রেম সব্বাস্ত্রগণ্য । (সমরেন্দ্রনাথ অধিকতর আগ্রহের সহিত শ্রবণ করিতে লাগিলেন।) সামান্য সত্ৰীলোকের প্রেম আমি আকাঙ্ক্ষা করিতাম না, যে প্রেম মানব-হৃদয়কে একেবারে পরিপণ করিতে পারে, যে প্রেম জীবনের অংশস্বরুপ, দেহের আত্মাস্বরপ, যে প্রেম শেষ হইলেই জীবন শেষ হয়, সেইরাপ প্রেম আমি আকাঙ্ক্ষা করিতাম। কতবার অন্ধকারে বসিয়া সেই প্রেমের কল্পনা করিতাম। চিস্তাবলে কতবার শান্য হইতে অলৌকিক স্নেহসম্পন্না প্রেমপ্রতিমাকে জাগরিত করিয়া তাঁহারই সহিত কালহরণ করিতাম ! সহসা সে সন্দের মাত্তি জলবিশ্বের ন্যায় ভিন্ন হইয়া ষাইত; কল্পনাশক্তি শ্রাস্ত হইত; আমি সহসা মচ্ছিত হইয়া ভূমিতে পতিত হইতাম । “দিন দিন এইরুপ কল্পনা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। দিবাকালে অদ্ধেক সময় আমি এজগতে থাকিতাম না, কালপনিক জগতে বিচরণ করিতাম। সে জগতে উক্তজবল আকাশ, উত্তজনল ক্ষেত্রবক্ষ, উত্তজবল অট্টালিকা, উত্তজবল গহন্দ্রব্যাদি,—তন্মধ্যে সেই উক্তজবল প্রেমপ্রতিমা আসীন রহিয়াছেন। নিবিড় কৃষ্ণকেশে জ্যোতিময় সবণকান্তি মুখমণ্ডল বেস্টন করিয়া রহিয়াছে, বালিকার রক্তবর্ণ ক্ষুদ্র ওঠ দটী অলপ প্রেমহাস্যে বিসফারিত, ভ্রমর-কৃষ্ণ চক্ষ দটী প্রেমাশ্রতে পরিপািণ, সমস্ত মুখমন্ডল প্রেমে ঢল ঢল করিতেছে। সহসা কল্পনাশক্তি ছিন্ন-তার বীণাসম নীরব হইত। আমিও মচ্ছিত হইতাম । “একদিন নিশাবসানে ঐ রপ-কলপনা ছিন্ন হওয়াতে আমি মচ্ছিত হইয়া এই গঙ্গাতীরে ঐ নিকুঞ্জবনে শ্যইয়া রহিয়াছি। কতক্ষণ মচ্ছিত ছিলাম বলিতে পারি না—বোধ হইল, মস্তকে ও মুখে কে জলসিঞ্চন ও ব্যজন করিতেছেন। ধীরে ধীরে চক্ষ উন্মীলন করিয়া দেখি,-আপনি বিশ্বাস করিবেন না,—সেই প্রেমপ্রতিমা! সেই স্বপ্নদটি বালিকা মাত্তিমতী হইয়া আমার মখে জল দিতেছে!” উভয়েই অনেকক্ষণ নিস্তব্ধ রহিল। সুরেন্দ্রনাথ এইরুপ অসম্ভব কথা শুনিয়া বিসিমত হইলেন। ক্ষণেক পর সেই অপরিচিত লোক আবার বলিতে লাগিলেন,— “সমরেন্দ্রনাথ ! আমি আর অধিক কথা কহিতে পারি না। জিজ্ঞাসায় জানিলাম, সেই বালিকা কায়স্থকন্যা, অবিবাহিতা, অনাথা এবং জ্ঞাতির অন্নে পালিতা। আমি বালিকার ফু লিম অফ দ্য করলে ফল প্ল অতিবাহিত হইল, তাহা বৰ্ণনার | “ঐ যে নিকুঞ্জবন দেখিতেছেন, ঐ স্থানে আমরা বাস করিতাম। শরৎকালের উষা আকাশে যে পবিত্র বণ বিস্তীণ করে, প্রেম আমাদের হৃদয়-আকাশে তদপেক্ষা পবিত্র বণে চিরকালই রঞ্জিত হইয়া থাকিত। সন্ধ্যার ঈষৎ অন্ধকার যেরপে শান্ত ও নিস্তব্ধ, আমাদের হৃদয়ে প্রেম তদপেক্ষা নিস্তব্ধ ও শান্তভাবে বিরাজ করিত। আমি সে রমণীকে কুঞ্জবাসিনী বলিতাম, কেন না, ঐ যে কুঞ্জবন দেখিতে পাইতেছেন, ঐ স্থানে”— আর কথা সরিল না। সরেন্দ্রনাথ দেখিলেন অপরিচিত উন্মত্তের ন্যায় সেই কুঞ্জবনের দিকে চাহিয়া রহিয়াছেন—মুখে কোন ভাবই নাই, সংজ্ঞার কোন লক্ষণ নাই। সুরেন্দ্রনাথ অনেক যত্নে তাঁহাকে চৈতন্যদান করিলেন। পরে অন্য কথা কহিতে কহিতে রাত্রি অনেক হইল। দই ভ্রাতার মত দুই জন এক শয্যায় শয়ন করিলেন, অচিরে নিদ্রায় অভিভূত হইলেন।