পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रटअश्वा ब्रळनावली টোড। আমার অপেক্ষা গৌরবের কাষে আমার জীবনের একজন বন্ধ প্রাণ বিসঙ্গজনি করিয়াছেন। টোডরমল্ল এই কথা বলিয়া একটী দীঘনিশ্বাস ত্যাগ করলেন। ইন্দ্রনাথ নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন; টোডরমল্ল ধীরে ধীরে কহিতে লাগিলেন,—অদ্য আমার আনন্দের দিন, অদ্য যেরপে শত্রম পরাস্ত হইয়াছে তাহা শুনিয়া দিল্লীশ্বর অতিশয় তুস্ট হইবেন, কিন্তু এই আনন্দের মধ্যে অদ্য আমার একটী দুঃখের কথা মনে উদয় হইতেছে। এই মাসের এই দিনে আমার বাল্যকালের একজন পরম সািহদ জীবন বিসঙ্গজন করিয়াছিলেন। সে আজ ঠিক দ্বাদশ বৎসর হইল । ইন্দ্র। সে মহাত্মাও বোধ হয় যোদ্ধা ছিলেন, তিনিও বোধ হয় দিল্লীশ্বরের কায্যে জীবন দান করিয়াছিলেন। টোড। আশৈশব তাঁহার যুদ্ধ ভিন্ন অন্য ব্যবসা ছিল না, কিন্তু তিনি দিল্লীশ্বরের কায্যে জীবন দান করেন নাই, দিল্লীশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া জীবন দিয়াছেন। টোডরমল্লের মুখে এ কথা শুনিয়া ইন্দ্রনাথ চমকিত হইলেন, টোডরমল্ল ঈষৎ হাসিয়া দিল্লীশ্বরের পরাতন দাসের নিকট দিল্লীশ্বরের শত্রর প্রশংসা শুনিয়া তুমি চমকিত হইতেছ; কিন্তু তুমি যদি দিল্লীতে কখন গমন কর, স্বয়ং আকবরশাহের মুখে তাঁহার পরম শত্র রাণা প্রতাপসিংহের প্রশংসা শুনিয়া আরও চমকিত হইবে। ইন্দ্রনাথ । আকবরের কায্যে আমার জীবন অতিবাহিত হইয়াছে, আকবরের শরই আমার শত্রম; কিন্তু তথাপি সাহস, অধ্যবসায় ও স্বদেশপ্রিয়তা দেখিলে, কি শত্র কি মিত্ৰ সকলেই প্রশংসা করে। প্রতাপসিংহ সবদেশের স্বাধীনতায় যেরপে প্রাণ পয্যন্ত পণ করিয়া পৰ্বতকন্দরে ও মরুভূমিতে বাস করিয়া বৎসর বৎসর আকবরের সৈন্যের সহিত যুদ্ধ দান করিতেছেন তাহাতে আকবরশাহ স্বয়ং বিসিমত ও আনন্দিত হইয়াছেন। আজি চারি বৎসর হইল প্রতাপ হলদীঘাটার যুদ্ধে অনেক সৈন্য হারাইয়াছেন, তাহার পর দাগ, ভূমি, সম্পত্তি, সমস্তই হারাইয়াছেন, কিন্তু মনষ্যের পণ, মনষ্যের সাহস ও অধ্যবসায় হারান নাই। কন্দরবাসী প্রতাপ এখনও স্বদেশের জন্য যঝিতেছেন, যত দিন জীবিত থাকিবেন যঝিবেন। কি শত্র কি মিত্র, ভারতবষে এরপ হিন্দ নাই, এরপ মুসলমান নাই, যে তাঁহার সাধুবাদ করে না। ভারতবষী আজ প্রতাপসিংহের গৌরবে পণ । ইন্দ্রনাথ এই কথা শুনিয়া উৎসাহপণে হৃদয়ে স্তব্ধ হইয়া রহিলেন। টোডরমল্ল ধীরে ধীরে কিন্তু প্রতাপসিংহের কথা আমি অদ্য চিন্তা করি নাই; আর একজন যোদ্ধা, যিনি দ্বাদশ বৎসর হইল সেই মেওয়ারের রাজধানী চিতোর রক্ষাথ জীবন দান করিয়াছিলেন, তাঁহারই চিন্তা করিতেছিলাম। ইন্দ্রনাথ! অদ্য তোমার কায্য দেখিয়া আমি তুষ্ট হইয়াছি, সকলের সম্মুখে আমি যে কথা বলি না তোমাকে তাহা বিশ্বাস করিয়া বলিতেছি। একটী গলপ শ্রবণ কর – যৌবনের প্রারম্ভে আমি মেওয়ার দেশে একবার ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলাম। একটী বরাহশীকারে আমি প্রায় জীবন হারাইয়াছিলাম, একজন অসরেবীয্য যোদ্ধার অব্যথ বর্ষণ আঘাতে সে বরাহ হত হইল, আমি পরিত্রাণ পাইলাম। সেই অসরেবীয্য যোদ্ধা সৰ্য্যেমহল-দগের তিলকসিংহ। ক্রমে তিলকসিংহের সহিত আমার বিশেষ সৌহৃদ্য হইল, তখন তাঁহার অসাধারণ গণে আমি ক্রমে ক্রমে জানিতে পারিলাম, তিনিও আমাকে অতিশয় স্নেহ করিতে লাগিলেন। ক্রমে আমাদের মধ্যে প্রকৃত বন্ধত্বে হইল। জীবনের বন্ধত্ব একবার হয়, দইবার হয় না। ইন্দ্রনাথ ! নারীর প্রণয়ের কথা তুমি অনেক পড়িয়াছ, অনেক শনিয়াছ, কিন্তু যৌবনে দুইজন সরলস্বভাব, উৎসাহপণ পরষের মধ্যে যে বন্ধত্ব হয়, তাহা অপেক্ষা প্রকৃত প্রণয় আমি এ জগতে কিছুই জানি না। যখন আমি দিল্লীশ্বরের কায্যে ব্ৰতী হইলাম, তখন তিলকসিংহকেও সেই কায্যে ব্রতী করিবার চেষ্টা করিলাম। তাঁহার ন্যায় রণপণ্ডিত ও অসরেবীয্য যোদ্ধা যদি দিল্লীশ্বরের কায্য স্বীকার করিতেন, তাহা হইলে দিল্লীশ্বরের এরপে সেনাপতি নাই, যে তিলককে গরে বলিয়া না মানিত। তিনি এতদিনে বঙ্গদেশ বা দাক্ষিণাত্যের শাসনকৰ্ত্তীর্ণ হইতেন ।" কিন্তু তিলকসিংহ সে কায্যে ব্ৰতী হইলেন না। তিনি আমার প্রস্তাবে যে উত্তর দিলেন ○bf