পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बक्रर्गबट्जङा নগেন্দ্রনাথ। তাহা যদি শ্রবণ করিতাম, তাহা হইলে আর এতক্ষণ জীবিত থাকিতাম না। • চন্দ্র। তবে এত চিন্তিত হইতেছেন কেন ? সরেন্দ্রনাথ কিছুদিনের জন্য বিদেশে গিয়াছেন, ঈশ্বর-ইচ্ছায় অবশ্যই কুশলে প্রত্যাবৰ্ত্তন করবেন। নগে। আশীব্বাদ করন যেন তাহাই হয়। কিন্তু আমি কল্য রাত্রিযোগে অতিশয় কুস্বপ্ন দেখিয়াছি, সেই জন্যই ব্যাকুল হইয়াছি, সেই জন্যই আপনার নিকট আসিয়াছি। বোধ হইল যেন ভয়ঙ্কর তরঙ্গরাশির মধ্যে আমার পত্রকে দেখিলাম, যেন সে তরঙ্গরাশিতে আমার দেবতুল্য পত্র নিমগ্ন হইতেছে, দরে দেশে বন্ধনহীন সহায়হীন হইয়া নিমগ্ন হইতেছে। প্রভু! SiB BB BB Biee | চন্দ্রশেখর বলিলেন,–শাস্ত হউন। ভগবান আপনার বীর পত্রকে রক্ষা করিবেন; পণ্যাত্মা প্রজাবৎসল জমীদারকে বদ্ধবয়সে পত্রহীন করিবেন না। নগেন্দ্রনাথ সজলনয়নে উত্তর করিলেন,—প্রভু! আমাকে পণ্যাত্মা বলিবেন না, আমি বহন পাপে কলঙ্কিত। যদি রুচি হয়, যদি আমার প্রতি আপনার অনুগ্রহ হয়, আমার পাপ-কথা শ্রবণ করন, তৎপরে উপায় বিধান করন। যখন আমার সুরেন্দ্রনাথের বয়ঃক্রম দ্বাদশ বর্ষ, তখন আমি সপত্রে রাজা সমরসিংহের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়াছিলাম। আপনি জানেন, রাজা সমরসিংহ বঙ্গদেশীয় কায়স্থ জমীদারদিগের শিরোরাত্ব ছিলেন, এবং আমাকে কনিষ্ঠ ভ্রাতার মত ভালবাসিতেন। একদিন আমরা দুইজনে কথা কহিতেছি, আমাদের পাশ্বে সমরেন্দ্রনাথ আর সমরসিংহের একমাত্র দুহিতা ক্রীড়া করিতেছিল। ক্রীড়াচ্ছলে সেই দহিতা একটী পাপমাল্য লইয়া সমরেন্দ্রনাথের গলায় পরাইয়া দিল । রাজা কন্যাকে প্রাণাপেক্ষা ভালবাসিতেন, কন্যার এই কাৰ্য্যটী দেখিয়া আনন্দে তাঁহার চক্ষতে জল আসিল। আমাকে বলিলেন,—নগেন্দ্রনাথ, অনেক রাজপত্রের সহিত আমার এই কন্যার সম্ববন্ধ হইতেছে; কিন্তু কন্যা যাহাকে আপনি বরণ করিয়াছে তাহারই সহিত আমি উহার বিবাহ দিব। আমার আনন্দের পরিসীমা রহিল না, বঙ্গচড়ামণি রাজা সমরসিংহ একমাত্র দহিতাকে যে এই অকিঞ্চিৎকর জমীদারের পত্রের হস্তে অপণ করিবেন, তাহা আমার সৌভাগ্য। সেইদিনই আমরা অঙ্গীকারে বদ্ধ হইলাম,—সে অঙ্গীকার আমি ভঙ্গ করিয়াছি। মহাশ্বেতা অবগন্ঠেনের ভিতর হইতে তীক্ষা কটাক্ষপাত করিতেছিলেন, তাঁহার শরীর কণ্টকিত হইতেছিল। তিনি নগেন্দ্রনাথের মুখে এই কথা শুনিবার জন্য তথায় বসিয়া ছিলেন। নগেন্দ্রনাথ আবার বলিতে লাগিলেন,—আমি সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়াছি। সমরসিংহের মৃত্যুর পর আমি নিরাশ্রয় বিধবার কন্যার সহিত আমার পত্রের বিবাহ দিতে অসম্মত হইলাম। তখন আমি অন্য সম্প্রবন্ধ স্থির করিতে লাগিলাম । বঙ্গদেশে সমদ্ধিশালী কায়স্থ জমীদারের অভাব নাই, ইচ্ছাপরের জমীদার কুলের সহিত সম্প্রবন্ধ স্থাপনে কেহই বিমুখ নহেন । শীঘ্রই উপযুক্ত পাত্রী পাইলাম। কিন্তু যদিও আমি অঙ্গীকারভঙ্গে তৎপর হইয়াছিলাম, আমার ধৰ্ম্মপরায়ণ পত্র তাহাতে অসম্মত হইল। একদিন আমাকে বলিল,—পিতা, আমি আপনার কোন কথায় অবাধ্য হইতে পারি না, কিন্তু একটী বিষয়ে আমাকে ক্ষমা করিবেন, আপনি রাজা সমরসিংহের নিকট যে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন, তাহা ভঙ্গ করিতে দিব না। পত্রের এই যথার্থ কথায় আমি রন্ট হইলাম, তৎক্ষণাৎ নতন পাত্রীর সহিত বিবাহের দিন স্থির করিলাম, বলপবেক তাহার সহিত সুরেন্দ্রনাথের বিবাহ দিবার উপক্রম করিলাম। কিন্তু আমার পত্রের কথাই রহিল, আমার পত্র গোপনে গহত্যাগ করিয়া পলায়ন করিল,—তাহাকে সেই অবধি আর দেখি নাই! নগেন্দ্রনাথ আবার বলিতে লাগিলেন,—সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়াছি, সেই জন্য এই বদ্ধ বযসে আমার এই যাতনা। কোথায় এই বয়সে আমার অশ্বিনী-কুমারের ন্যায় দই পত্র আমার করিবে, তাহা না হইয়া আমার পত্র নাই, পত্রবধ নাই, স্নেহময়ী সহধর্মিণী নাই, অগাধ সমুদ্রে ভাসিতেছি। প্রভু! আমার ন্যায় হতভাগ্য এ তিন সংসারে আর কে আছে ? এই কথা সাঙ্গ কুরিয়া বদ্ধ দই হস্তে চক্ষ আবরণ করিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন, সে রোদন শনিয়া সকলের হৃদয় বিগলিত হইল। চন্দ্রশেখর অনেকক্ষণ সান্ত্বনা করায় অবশেষে বদ্ধ শাস্তি লাভ করিলেন। 8ఫి . 8