পিতা এঁর হাতে আমাকে রাখিয়া গিয়াছেন তখন এঁর শাসনের বাহিরে যাই কি করিয়া?” এইরূপ বাক্যে রাণী ব্যথিতা হইলেন, ইহা কি রাজবাক্য? রাজার দুর্ব্বলতায় গোপীপ্রসাদ বুঝিলেন রাজা তাঁহার মুঠোর মধ্যে, সিংহাসন ও তাঁহার মধ্যে ব্যবধান যাহা কিছু তাহা এরই জন্য, একে সরাইতে পারিলে রাজমুকুট হেলায় তাঁহার মাথায় আসিয়া পড়িবে।
অনন্তমাণিক্যকে মারিবার জন্য ষড়যন্ত্র চলিল, গোপীপ্রসাদ কংসের ন্যায় বধের উপায় ভাবিতে লাগিলেন। গদা ভীম নামক মল্লের নিকট অনন্তমণিক্যের মল্লবিদ্যা শিখিবার ব্যবস্থা হইয়াছিল। গোপী প্রসাদ একে ইঙ্গিত করিলেন মল্লবিদ্যা অভ্যাসের ফাঁকে সহসা এর শ্বাস রোধ করিতে হইবে। কিন্তু গদা ভীম ইহাতে কিছুতেই রাজি হয় নাই। অবশেষে নিজ ভাগিনেয় মর্দ্দন নারায়ণকে এ কার্য্যে নিযুক্ত করেন। মর্দ্দনের হাতেই অনন্তমাণিক্যের জীবনান্ত ঘটিল। অনন্তমাণিক্যের রাজত্বকাল অতি অল্প।
অনন্তমাণিক্যের বধ সাধন করিয়া ম্যাকবেথের ন্যায় গোপীপ্রসাদ উদয়মাণিক্য নাম ধরিয়া ১৫৭৭ খৃষ্টাব্দে রাজপাটে বসিলেন। বিধবা রাণী অনন্তমাণিক্যের সহমরণ ইচ্ছা করিলে গোপীপ্রসাদ বাধা দেন। তখন রাণী পিতাকে তীব্র ভাষায় কটূক্তি করিলেন—“তুমি রাজহন্তা, তোমার গতি ক্ষুরধার নরক।” এই বলিয়া রাণী রাজসিংহাসন দাবী করিলে গোপীপ্রসাদ রাজপাট উদয়পুরের সন্নিকটস্থ চন্দ্রপুর গ্রামে তুলিয়া নেন