পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/১৮৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
 
১৫৭
 

আরাকান রাজ্যে
গোবিন্দমাণিক্য ও সুজা

 গোবিন্দমাণিক্যের সহিত তৎকালে অনুজ জগন্নাথ, যুবরাজ রামদেব, জগন্নাথ-তনয় সূর্য্যপ্রতাপ ও চম্পকরায় ছিলেন। রাণী ও স্বীয় পরিজনবর্গসহ গোবিন্দমাণিক্য আরাকানপতির আতিথ্যগ্রহণ করিয়া সেখানে বসবাস করিতে লাগিলেন। এদিকে অদৃষ্ট চক্রের ঘূর্ণনে যে সুজা বঙ্গের শাসনকর্ত্তাপদে অধিষ্ঠিত থাকিয়া নক্ষত্ররায়কে ত্রিপুরসিংহাসনে বসাইলেন, তিনি কিয়ৎকাল মধ্যেই মসনদ্‌চ্যুত হইয়া গোবিন্দমাণিক্যের ন্যায় পথে পথে ফিরিতে লাগিলেন। নিয়তির কি পরিহাস! গোবিন্দমাণিক্য যে আরাকানপতির আশ্রয়ে দিনপাত করিতেছিলেন, সেই একই স্থানে সুজা ঔরঙ্গজেবের ভয়ে কোনওরূপে প্রাণে বাঁচিবার জন্য বেগম ও সাহজাদীসহ আশ্রয়প্রার্থী হইলেন।

 তখন রসাঙ্গরাজ ও গোবিন্দমাণিক্য আলাপে রত ছিলেন এমন সময় কক্ষচ্যুত গ্রহের ন্যায় সুজা আসিয়া উপস্থিত। গোবিন্দমাণিক্য স্বীয় স্বভাবের ঔদার্য্যে তৎক্ষণাৎ নিজ আসনে সুজাকে বসিতে দিলেন। রসাঙ্গরাজের ইহা অভিপ্রেত ছিল না। তিনি স্পষ্টই বলিয়া উঠিলেন—“ম্লেচ্ছ সুজাকে দেখিয়া আপনার আসন ত্যাগের কোন কারণ নাই, আপনি স্বচ্ছন্দে বসিয়া থাকিতে পারেন।” কিন্তু সুজা ন্যায়তঃ এ সম্মান তাঁহার নিকট পাইতে পারেন এই বলিয়া গোবিন্দমাণিক্য শিষ্টাচার দেখাইতে ত্রুটি করিলেন না। রসাঙ্গরাজের বাক্যে সুজার মনের অবস্থা কিরূপ হইয়াছিল তাহা এক অন্তর্যামীই বুঝিয়াছিলেন। হায় মানুষের অদৃষ্ট!