পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/৩১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



রাজমালা
মহারাজ যযাতি

হইল। তিনি বলিলেন—‘আচ্ছা, আমি এর একটা উপায় করিতেছি। তোমাকে এই বর দিতেছি, তুমি নিজের জরা অপরকে দিতে পারিবে। যদি কোন তরুণ তোমার জরা গ্রহণ করে তবেই তুমি শাপমুক্ত হইলে।’

 যযাতি এইরূপে অভয় পাইয়া নিজ পুত্রগণকে তাঁহার জরা গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু পুত্রগণ একে একে অসম্মতি জানাইল। তখন সর্ব্বকনিষ্ঠ পুরু পিতৃআদেশ পালন করিতে সম্মতি জানাইল। পিতৃভক্ত পুরু কহিল—‘পিতঃ, যে পুত্র আপনা হইতেই পিতার অভিপ্রায় বুঝিয়া অনুরূপ কায করে সে পুত্র উত্তম; পিতার আদেশে যে কায করে সে মধ্যম; অশ্রদ্ধায় যে তৎকার্য্য পালন করে সে অধম, আর যে পুত্র আদেশ পালন করে না সে পিতার বিষ্ঠা মাত্র।’ এই প্রকার বলিয়া পুরু সানন্দে পিতার জরা গ্রহণ করিল। এদিকে মহারাজ যযাতি পুত্রের যৌবন পাইয়া রাজত্ব করিতে লাগিলেন।

 দীর্ঘকাল রাজ্য ভোগ করিতে করিতে যযাতির বৈরাগ্য উপস্থিত হইল। সংসার অসার বোধ হইল; যাহা পূর্ব্বে মধুর লাগিয়াছিল এখন তাহা তিক্ত ঠেকিতে লাগিল। পিতৃভক্ত পুরুকে কহিলেন–‘বৎস, সংসারের সাধ মিটিয়াছে; তোমার যৌবন তোমাকে ফিরাইয়া দিতেছি এই লও, আমার জরা ফিরাইয়া দাও। আমি পরমপুরুষের ধ্যান করিতে বনে যাইতেছি।’