পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/৯৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
৬৬
ধর্ম্মমাণিক্য ও রাজমালা

আগু বাড়াইয়া নিতে আসিল। সেনাপতিদের রাজ্যলোভের নেশা ছুটিয়া গেল, তাহারাও সৈন্যদের সহিত যোগ দিল। কুচক্রী চারি ভাইয়ের দুঃস্বপ্ন কাটিয়া গেল, তাহারা ত্বরিতে ধর্ম্মকে অভ্যর্থনা করিতে ছুটিয়া আসিল। সেনাপতিরা ধর্ম্মের পায়ে লুটাইয়া পড়িল। তখন ধর্ম্ম তাঁহার অনুজ চারি ভাইকে আলিঙ্গন করিলেন। সকলেরই চক্ষুতে আনন্দের অশ্রু বহিতে লাগিল। আকাশ ভরিয়া মহারাজ ধর্ম্মমাণিক্যের জয়ধ্বনি ঘোষিত হইল। এমনি করিয়া বিপদের মহানিশা কাটিয়া গিয়া সুখের সূর্য্যোদয় হইল।

 শুভদিনে ধর্ম্মমাণিক্যের অভিষেক হইল, পুরবাসীর আর আনন্দ ধরে না। ধর্ম্ম নামের সার্থকতার মধ্যে তাঁহার জীবন ফুটিয়া উঠিয়াছিল। কুমিল্লার ধর্ম্মসাগর আজও তাঁহার পুণ্যকীর্ত্তি ঘোষণা করিতেছে। পুণ্য দিনে এই উত্তম জলাশয় উৎসর্গ কালে কনোজী ব্রাহ্মণগণকে উহার পারে প্রতিষ্ঠিত করিয়া বহু ভূমি দান করেন। তাম্রশাসনে এই কথা লিখিয়া দেন—“আমার বংশ যদি লোপ পায় এবং এই রাজ্য অন্য রাজার হস্তে চলিয়া যায় তবে আমি সেই রাজার দাসানুদাস হইব যদি তিনি ব্রহ্মবৃত্তি লোপ না করেন।”

 মহারাজ ধর্ম্মমাণিক্যের বীরত্বের তুলনা নাই। তিনি যেমন ধার্ম্মিক তেমন বীর ছিলেন। মুসলমানদের প্রতাপ বঙ্গের প্রায় সর্ব্বত্র বাড়িয়া চলিল, অবশেষে ধর্ম্মমাণিক্য বাঙ্গালা আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তাঁহার জয় হইল, বঙ্গের নবাব হঠিয়া গেলেন।