উঠানে কিছু বেগুন ও শাক জন্মিয়াছিল। বাড়ির চারিদিকে নলচিতের বেড়া, দরমার ঝাঁপ, সুতরাং উক্ত গৃহমধ্যে প্রবিষ্ট হইতে রমণীকে বেগ পাইতে হইল না।
প্রবেশ করিয়াই সে বরাবর অন্তঃপুরে চলিল। সেখানে দুইটি প্রাণী ব্যতীত অপর কাহাকেও দেখা যাইতেছিল না, দিবানিদ্রা সারিয়া অপর পুরবাসিনীগণ সম্ভবত এদিক ওদিক ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। দুইটি প্রাণী— একটি অষ্টাদশবর্ষীয়া যুবতী, অপরটি চারি বৎসরের এক শিশু। তরুণী কাপড়ের উপর ফুল তুলিতে ব্যস্ত ছিল, শিশু আপনমনে খেলা করিতেছিল। সে অপরূপ এক খেলা, পার্শ্বস্থিত দোয়াতের সবখানি কালি একেবারে মুখে মাখিয়া তাহার আনন্দের অবধি ছিল না, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পাঠশালায় যাইবার সময় অনবধানতাবশতঃ দোয়াতটি সেখানে ফেলিয়া গিয়া থাকিবে, দুষ্ট শিশু দাদার ভুলের শাস্তি ভাল করিয়াই দিতেছিল।
আগন্তুক তরুণী পাশে মাটিতে বসিয়া পড়িয়া জিজ্ঞাসা করিল, কি করছিস লা?
আনন্দে তরুণীর মুখে হাসি দেখা দিল, বলিল, কি ভাগ্যি, দিদির আজ এত দয়া! না জানি কার মুখ দেখে আজ উঠেছি! অভ্যাগতাও হাসিল, হাসিয়া বলিল, কার মুখ দেখে উঠবে আবার? রোজ যার মুখ দেখ, তার মুখই দেখেছ।
কিন্তু এই কথাতে যুবতীর মুখ সহসা কালো হইয়া উঠিল। অভ্যাগতা অপ্রস্তুত হইল, তাহারও মুখের হাসি মিলাইয়া গেল।
“অভ্যাগতা যে ত্রিংশৎবর্ষবয়স্ক একথা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। সে শ্যামবর্ণা—কাল নয়—কিন্তু তত শ্যামও নয়। মুখকান্তি নিতান্ত সুন্দর নয়, অথচ কোন অংশ চক্ষুর অপ্রিয়কর নয়; তন্মধ্যে ঈষৎ চঞ্চল মাধুরী ছিল, এবং নয়নের ‘হাসিহাসি’-ভাবে সেই মাধুরী আরও মধুর হইয়াছিল। দেহময় যে অলঙ্কার সকল ছিল, তাহা সংখ্যায় বড় অধিক না হইবে, কিন্তু