বুঝাইয়া বলিল। সে সংবাদ পাইয়াছে যে, তাহার স্ত্রী এখানে—সে মনোমালিন্যের ওজুহাতে বাড়ি ছাড়িয়া আসিয়াছে, তাহাকে ফিরিয়া যাইবার সাহায্যার্থে অনুরোধ করিতে সে আসিয়াছে। মথুর স্বামীর কাছে স্ত্রীকে ফিরাইয়া দিবার এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করিতে পারিল না,— চম্পকের হাসিমুখ দেখিবার ও সাংসারিক শান্তির ইচ্ছা তো ছিলই আরো অন্যান্য অনেক দিক বিচার করিয়া ইহা ছাড়া অপর কোন পন্থাও সে দেখিতে পাইল না।
যখন মাতঙ্গিনীকে সংবাদ দেওয়া হইল তাহাকে যাইতে হইবে, নিজের ভাগ্যে যাহা ঘটিবে সে কথা ভাবিয়া তাহার শরীরের রক্ত হিম হইয়া গেল। প্রায় জীবন্মৃত অবস্থায় সে সুকীর মায়ের পিছনে পিছনে চলিল, তাহাকে বাড়িতে রাখিয়া আসিবার ভার সুকীর মায়ের উপর পড়িয়াছিল। তারা খিড়কির দোর অবধি তাহাকে আগাইয়া দিল, এবং সম্ভব হইলে আরও খানিক আগাইয়া দিত। তাহাকে সে ভারীমনে বিদায় দিল এবং স্বামীর সহিত মনোমালিন্য ভুলিয়া সুখে শান্তিতে থাকিবার কথা সে মাতঙ্গিনীকে বার বার করিয়া বলিল।
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
পরামর্শ ও মন্ত্রণা
মধুমতীর বন্য অথচ সুদৃশ্য দুই তীর, নিকটে জনাকীর্ণ গ্রামের অবস্থান সত্ত্বেও, সুদীর্ঘ দুর্ভেদ্য তৃণে আচ্ছন্ন, এবং এই তৃণভূমি মনুষ্যপদলাঞ্ছিত নহে। রাধাগঞ্জের ঈষৎ দক্ষিণে এইরূপ একটি অদ্ভূত-নির্জনতা-হেতু প্রায় ভয়াবহ স্থান আছে। নিবিড় তৃণভূমিই শুধু স্থানটিকে সুদুর্গম করিয়া রাখে নাই, ঘনসন্নিবিষ্ট সুদীর্ঘ বেতসলতা ও অন্যান্য লতাগুল্ম ইহাকে অধিকতর দুর্গম করিয়াছে। নদীতীর হইতে ভিতরে বহুদূর