পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজমোহনের স্ত্রী So o কিন্তু তারার স্নেহ-দৃষ্টির কাছে তাহার এই প্রয়াস ধরা পড়িতে বিলম্ব হইল না। মথুর বলিল, পাগল ! যত আজগুবি কথা ! আমার আবার দুঃখ হবে কেন ? তারা ব্যগ্র অথচ স্নেহপূর্ণস্বরে বাধা দিয়া বলিল, প্রিয়তম, আমাকে ফাকি দেবার চেষ্ট করে না। আমি জানি তুমি আমাকে আর আমার ভালবাসাকে উপেক্ষা কর । আমরা মেয়েমানুষ, স্বামী যে আমাদের কি— আমি জানি না, স্বামী আমাদের কি নয় ! তুমি সারা সংসারকে ফাকি দিতে পারবে, কিন্তু আমাকে পারবে না । মথুর বলিল, তুমি পাগল না হ’লে আমার সম্বন্ধে এমন কথা ভাবতে না —তাহার কণ্ঠস্বরে এমন কিছু ছিল, যাহা তাহার নিজের কথারই প্রতিবাদ করিতেছিল –এসব ভাবার কারণটাই খুলে বল । তারা বলিল, এর কারণ তুমি নিজে। শোন। জানি, অনেক বিষয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হয় ; তোমার তালুক, তোমার মামলা-মকদ্দম, তোমার খাজনা, তোমার কাছারি, তোমার বাড়ি, বাগান, দাসদাসী, তোমার সংসার—অনেক কিছু নিয়েই তোমাকে ভাবতে হয় ; আমার কি আছে ? আমার স্বামী আর আমার মেয়ে । আমি যদি বলি, গত তিন দিন ধরে আমি লক্ষ্য করছি আমার স্বামীর চলার ভঙ্গীতে পূৰ্ব্বেকার সেই তেজ আর গৰ্ব্বের অভাব হয়েছে, তাতে অবাক হবার কি আছে ? তোমার চোখে শূন্ত দৃষ্টি, মাঝে মাঝে কেমন অদ্ভুত ভাবে তুমি চেয়ে থাক। তুমি আগের চাইতে কথা কম বল, তোমার হাসি তোমার অস্তরের হাসি নয়। দেপ, মায়ের চোখ এটা লক্ষ্য করতে কখনও ভুল করে না যে, তার সন্তানকে তার বাবা আগের মত তেমন আদরের সঙ্গে বুকে নেয় না ! হ্যা, গত তিন দিন ধ’রেই আমি দেখছি, বিন্দু যখনই তোমার হাত ধরেছে কিংবা তোমার কাছে বসে খেলা করেছে, তুমি তার সঙ্গে কথা বল নি । চাপার সঙ্গেও তো কই তোমাকে কথা বলতে দেখি না ।