স্বামীর ভবিষ্যৎ বিপদের আশঙ্কায় তাহার মন বিষন্ন হইল, সে সেখানেই প্রায় স্থাণুর মত দাঁড়াইয়া রহিল ; নীচু আলিসার উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া সে স্থির অথচ উদাস দৃষ্টিতে স্বামীর প্রত্যেকটি গতি-বিধি নিরীক্ষণ করিতে লাগিল । হঠাৎ আর সে স্বামীকে দেখিতে পাইল না। তবু সে সেদিকেই চাহিয়া রহিল—অন্ধকারের মধ্যে সবল দীর্ঘ মথুরের কোন চিহ্নই সে দেখিল না। সে এদিক ওদিক চাহিল—তাহার ভয় দশগুণ বাড়িয়া গেল। সেই বৃহৎ প্রাসাদের শিখরে অবিচলিত ভাষাহীন মর্ম্মরমূর্ত্তির মত শোভমানা তারা অনেক — অনেক ক্ষণ ধরিয়া নির্নিমেষ নেত্রে অরন্যের দিকে চাহিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। অবশেষে হতাশ হইয়া স্বামীর সন্ধান ছাড়িয়া দিবে, এমন সময় সহসা তাহার প্রার্থিত মূর্ত্তি তাহার চঞ্চল দৃষ্টিপথে পড়িল। মথুর তখন ( পাঠকের নিকট ) ‘গুদাম-মহল’ নামে পরিচিত বাড়ির পরিত্যক্ত অংশ হইতে বাহির হইবার ক্ষুদ্র লৌহ–দরজা দিয়া নিঃশব্দে নিষ্ক্রান্ত হইতেছিল ।
স্বামীকে নিজ গৃহের অংশ বিশেষে দেখিতে পাইয়া তারা অনেকটা নিশ্চিন্ত হইল। তথাপি তাহার ভয় তখনও সম্পূর্ণ দূর হয় নাই । বাড়ির বাহিরে স্বামীর এই নৈশ গোপন অভিসার, রাত্রির এই প্রহরে এবং বাড়ির এই অংশে যেখানে কেহ সচরাচর পদার্পণ করে না, সেখানে তাহার গতিবিধি — পূর্ব্বের আশঙ্কা ও ভীতি এবং সেই নিশাচর পক্ষীর অশুভ চীৎকার, যাহা তখনও তাহার কানে বাজিতেছিল—এই সব কিছু মিলিয়া তারার মনে অজ্ঞাত কোনও বিপদের সূচনা করিতেছিল । তারা তাহার পৰ্য্যবেক্ষণ-স্থান পরিত্যাগ না করিয়া পুনরায় স্বামীর আবির্ভাবের প্রতীক্ষা করিতে লাগিল । আবার কিছুকাল সে কিছুই দেখিতে পাইল না। প্রায় অর্দ্ধঘন্টা নিষ্ফল প্রতীক্ষায় কাটিয়া গেল, তাহার স্বামী সেই গুপ্ত দরজা দিয়া আর ফিরিল না। দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া সে ক্লান্ত হইয়া পড়িল, তাহার স্বামীর ব্যক্তিগত কোনও বিপদাপদ