পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
১১৫

করিতেছিল। পূর্ব্বোক্ত লৌহ দ্বার ব্যতীত যাতায়াতের আর একটি সত্য অথবা নকল পথ এই কক্ষে ছিল। আগেরটির মতন ইহাও একটি দরজা, কক্ষের এক কোণে অবস্থিত এবং আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় পাশ্ববর্ত্তী কোনও কক্ষে এই দ্বার দিয়া গমনাগমন চলে। ইহা কিন্তু আয়তনে আরও ক্ষুদ্র, এত ক্ষদ্র যে একটি শিশু হামা গুড়ি দিয়া সেই দরজা পার হইতে পারে। যে ভীষণদর্শন কক্ষটির কথা হইতেছিল, তাহাতে আসবাব-পত্রাদি কিছুই ছিল না—তাহা সম্পূর্ণ খালি ছিল। কক্ষের একটি মাত্র অধিবাসী, একজন পুরুম—কক্ষস্থিত প্রদীপের অস্পষ্ট কম্পমান আলোকে প্রতীয়মান হইতেছিল যে, সে কক্ষমধ্যে পদচারণা করিতেছে। পুরুষটি আর কেহই নহে, আমাদের মাধব ঘোষ।

 পাঠকের বিস্মিত হইবার কারণ নাই; মাধবকে যাহারা বন্দী করিয়াছিল, তাহারা এইখানেই তাহাকে আটক করিয়া রাখিয়াছে। কিন্তু তাহারা কেহই সেখানে উপস্থিত ছিল না। গভীর নিশীথের অর্দ্ধেক অতিবাহিত হইয়াছে। দরজার অর্গল বাহির হইতে বন্ধ ছিল এবং মাধব ঘোষ অন্তত বর্ত্তমানে কিছুকালের জন্য জীবন্ত কবরে সমাহিত হইয়াছিল। তথাপি তাহার নির্ভীক চিত্ত দমিয়া যায় নাই, তাহার আশাভঙ্গ হয় নাই। একটা ঘৃণা ও বিরক্তির ভাব তাহার মনকে আশ্রয় করিয়াছিল। সেই নির্জ্জন কক্ষে দীর্ঘপদসঞ্চারে পায়চারি করিতে করিতে মাধবের মনে এই সঙ্কল্প জাগ্রত হইল যে, যে ভয়ঙ্কর চরিত্রের দুর্ব্বৃত্তেরা তাহাকে বন্দী করিয়াছে, তাহাদের কোন ও অত্যাচারকেই সে গ্রাহ্য করিবে না।

 অবশেষে দরজার বাহিরের তালার চাবি খোলার শব্দ হইল। তাহার পর খিল খোলার শব্দ; হুড়কো এবং শিকল খুব সাবধানে খোলা হইল; সেই বিরাট দরজার পাল্লা দুইটির কব্জা ক্যাঁচক্যাঁচ করিয়া উঠিল এবং যে দুই বর্ব্বর দস্যু তাহাকে বন্দী করিয়াছিল, তাহারা নিঃশব্দে কক্ষে প্রবেশ করিয়া তেমনই সাবধানতার সহিত দরজা বন্ধ করিল।