আর আমাকে কালাপানি পার হতে হবে। আমি কিন্তু ধরা দিচ্ছি না। রাধাগঞ্জে এই আমার শেষ। তুমি আমাদের ভাল করতে চেয়েছিলে, পাছে কেউ কোনদিন বলে যে তোমার ভাল আমরা করি নি, তাই তোমাকে সাবধান করতে এসেছি।
উত্তরের প্রতীক্ষা না করিয়া দস্যু-সর্দ্দার ঝোপের আড়ালে অন্তর্হিত হইয়া গেল।
মথুর বাড়ি ফিরিয়া ঘণ্টা দুয়েক ভাবিল—তাহার মনের জোর ছিল, সহজেই সে সাহস সঞ্চয় করিতে পারিল। সে জানিত, পুলিস অর্থলোলুপ, অসৎ; তাহার অর্থের অভাব নাই; পুলিসকে ঘুষ দিয়া সে বশ করিবে। কিন্তু এক জায়গায় একটু গোল ছিল। সদরে ম্যাজিস্ট্রেটের আসনে একজন ধূর্ত্ত অতি চটপটে আইরিশম্যান অধিষ্ঠিত এবং সব কিছু ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করার বদ স্বভাবও তাঁহার ছিল। তিনি প্রায়শই পুলিসের অনেক পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার চেষ্টা করিতেন। কিন্তু মথুর ঘোষ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিল যে, যেমন করিয়াই হউক সেই অনধিকারচর্চ্চাকারী আইরিশম্যানের কাছে ভিখুকে দিয়া তাহার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করাইবে।
কে একজন ছুটিয়া ঘরে প্রবেশ করাতে তাহার চিন্তায় বাধা পড়িল; তাহার সর্ব্বাঙ্গ দিয়া বৃষ্টির জল ঝরিতেছে, কাদায় গা মাখামাখি। আগন্তুক জিলাকোটে তাহারই নিযুক্ত একজন বিশ্বস্ত কর্ম্মচারী।
লোকটি চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল, বাবু, পালান, আর এক মুহূর্ত্তও দেরি করবেন না।
বিমূঢ় মথুর বলিল, ব্যাপার কি?
—ভিখু নামের কে একজন আজ বেলা এগারোটার সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকার করেছে যে, সে কতকগুলি ডাকাতি আর রাহাজানি আপনার কথাতেই করেছে—নিশ্চয়ই সে মিথ্যা বলেছে হুজুর।