পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
১৩

লোকের ভোগে আসিবে যাহাদিগকে তিনি চেনেন না বলিলেই চলে। পত্নীর জীবিতকাল পর্য্যন্তও না হয় সম্পত্তি তাহার হাতছাড়া হইতে পারিবে না, কিন্তু আইন তাহাকে স্বামীর সম্পত্তি হইতে সামান্য ভরণপোষণের উপযোগী একটা ভাতা ছাড়া আর কিছুই লইতে দিবে না। তাঁহার অবর্ত্তমানে তাঁহার যুবতী পত্নী যাহাতে সম্পত্তির পূরা মালিক হইতে পারে বৃদ্ধ সে বিষয়ে অবহিত হইলেন; যুবতী পত্নীর পরামর্শ ও যুক্তি তাঁহাকে চালিত করিতে লাগিল। এ বিষয়ে নিজের মনোহর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এই যুবতীর অতি পরিষ্কার ধারণা ছিল বলিয়া সে স্বামীকে দিয়া ভবিষ্যতের পথ নিষ্কণ্টক করিতে লাগিল। সমস্ত স্থাবর সম্পত্তিকে অস্থাবর করিবার দিকে বৃদ্ধ ঝোঁক দিলেন। জমিদারিকে যতটা পারেন নগদ টাকা ও অস্থাবর সম্পত্তিতে তিনি রূপান্তরিত করিতে লাগিলেন। নগদ টাকা সম্বন্ধে তাঁহার এই লোভ এমনই বৃদ্ধি পাইয়াছিল যে, তিনি যেদিন মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন তাঁহার উত্তরাধিকারিণী সেদিন যে বিপুল ধন-সম্পত্তির মালিক হইয়া বসিল- স্থাবর জোতজমা তাহার অতি সামান্য অংশ মাত্র।

 করুণাময়ী যে বুদ্ধিমতী, সে বিষয়ে আমাদিগকে সন্দেহ করিবার অবকাশ মাত্র না দিবার জন্য স্থির করিল, রূপ এবং রূপ নামক যে দুইটি পদার্থের সে অধিকারিণী সেই দুইটিরই সদ্গতি করিতে হইবে। সে নিজেকে বুঝাইল, ঈশ্বরের অবতার রামচন্দ্র সীতাবিরহে কাতর হইয়া প্রিয়তমা পত্নীর প্রতি গভীর প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ স্বর্ণ-সীতা নির্ম্মাণ করাইয়া নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চাহিয়াছিলেন। মৃত স্বামীর প্রতি তাহার প্রভূত ভালবাসা এই প্রকারের প্রতিনিধি-পদ্ধতির সাহায্যেই বা সার্থক হইবে না কেন? সে আরও ভাবিল যে, যে প্রিয় চলিয়া গিয়াছে, যাহাকে সে হারাইয়াছে এবং যাহার বিরহে সে শোকার্ত্ত, সামান্য ধাতুমূর্ত্তিকে তাহার প্রতিনিধি না করিয়া যদি একজন রক্তে-মাংসে গড়া