পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
১৯

 —হেম, আমি বড় গবীব—এত গরীব, তবু শুধু নিজের জন্যে হ’লে তোকে কিছু বলতাম না। কিন্তু আমার স্বামী, সে যাই হোক বোন, ভগবান তাকে অমনই গড়েছেন—তবু সে আমার সব, তার জন্যে আমাকে ভাবতে হয়; সে এখন বেকার ব’সে আছে, অবস্থা তার ভারী খারাপ। তার হয়ে মাধবের কাছে তোকে কিছু বলতে বলেছে, পারবি?

 —পারব না কেন দিদি, কিন্তু কি বলব?

 —বলবি যদি সে তার একটা চাকরি জুটিয়ে দিতে পারে—এমন কিছু যাতে সংসারটা চ’লে যায়।

 —নিশ্চয়ই বলব দিদি।

 হেমাঙ্গিনী প্রতিশ্রুত হইল। তারপর দুই ভগিনী অন্য বিষয় লইয়া কথা বলিতে লাগিল।

 কিন্তু হেমাঙ্গিনী দিদির প্রতি স্নেহের প্রাবল্যে এমন একটি কাজের ভার লইল, যাহা সে কেমন করিয়া করিয়া উঠিবে, ভাবিয়া পাইল না। তাহার বয়সটা এমন কাঁচা যে, এ বয়সে আমাদের দেশের মেয়েরা স্বামীর সঙ্গে ভাল করিয়া কথাই বলিতে পারে না, এমন একটা বিষয় লইয়া কথা তো বলেই না। তবু সে মন স্থির করিয়া স্বামীকে তাহার দিদির সহিত যে কথাবার্ত্তা হইয়াছিল তাহা বলিয়া ফেলিল। মাধব সাধ্যমত চেষ্টা করিবে বলিল।

 রাজমোহন গোঁয়ারদের স্বাভাবিক সঙ্কোচবশতঃ সরাসরি ভায়রাভাইয়ের নিকট নিজের প্রয়োজনের কথা না জানাইয়া সাধারণত দরিদ্র আত্মীয়েরা যে পন্থার আশ্রয় লয়, সেই পথে শাড়ি-রাজ্যের প্রতিনিধির আশ্রয় লওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করিয়াছিল। মাধব কিন্তু রাজমোহনকে নিজেই জবাব দিবে স্থির করিল এবং পরদিন প্রাতে রাজমোহনের সহিত এ বিষয়ে কথাবার্ত্তা শুরু করিল। সে যতটা সম্ভব বিনীত ভাবে রাজমোহনের বর্ত্তমান অবস্থা ও কাজকর্ম্মের সম্বন্ধে প্রশ্ন করিল। রাজমোহন অন্ধ গর্ব্ব