অথবা লজ্জা অথবা অন্য কোনও মতলবের বশবর্ত্তী হইয়া নিজের দুরবস্থা স্বীকার না করিয়া, শুধু বলিল—বর্ত্তমানে তেমন কিছু করিতেছে না। মাধব তখন তাহাকে জানাইল যে, তাহার জমিদারির কিয়দংশের পরিচালনার ভার লইতে পারে এমন একজন বিশ্বাসী কর্ম্মঠ আত্মীয়ের সাহায্য তাহার আবশ্যক এবং রাজমোহনের যদি রাধাগঞ্জে গিয়া বাস করিবার কোনও আপত্তি না থাকে, তাহা হইলে এই আত্মীয়ের কাজটুকু করিয়া দিবার জন্য সে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করে।
রাজমোহন জবাব দিল, তা হয় না ভায়া এদের রেখে যাব কার কাছে?
মাধব বলিল, সে কথা কি না ভেবেই বলছি। রাধাগঞ্জেই একটা ভাল দেখে বাড়ি ঠিক ক’রে দেব।
রাজমোহন ভায়রাভাইয়ের দিকে তীব্র ক্রুদ্ধ দৃষ্টিপাত করিল। বলিল, রাধাগঞ্জে গিয়ে থাকবে! অসম্ভব, তার চাইতে জেলখানায় প’চে মরা ভাল।—বলিয়াই রাগে গরগর করিতে করিতে সে চলিয়া গেল।
মাধব রাজমোহনের এই অকারণ ক্রোধ দেখিয়া বিস্মিত হইল, কিন্তু কিছু বলিল না। রাজমোহনের কিন্তু বাছিয়া লইবার মত অন্য পথ ছিল না। তাহার স্ত্রীরও অজ্ঞাত এমন একটি কারণ ছিল যে জন্য অবিলম্বে বাসস্থান পরিবর্ত্তন তাহার পক্ষে নিতান্ত প্রয়োজন হইয়াছিল; কিন্তু সে রাধাগঞ্জে যাওয়ার কথা ভাবে নাই। সে দারিদ্র্যের দোহাই দিয়া আবেদন করিয়াছিল বটে, কিন্তু আবেদনের মূলে দারিদ্র্যের হাত সামান্যই ছিল। মাধবের প্রস্তাবে সে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াছে—এরূপ ভাব প্রকাশ করিল। চাদর লইয়া সে বাড়ির বাহির হইয়া গেল। মধ্যাহ্নের খররৌদ্রে ফাঁকা মাঠের পথে সে একটানা চলিতে লাগিল—দৌড়াইতে লাগিল বলিলেই যেন ঠিক বলা হয়। কোথাও সে দাঁড়াইল না, কাহারও