সহিত সে কথা কহিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলিয়া গেল, রাজমোহন ফিরিল না।
অবশেষে যখন সে ফিরিয়া আসিল, তখন সে গম্ভীর—মুখে বিরক্তির চিহ্ন পরিস্ফুট। সে সপরিবারে রাধাগঞ্জে যাওয়াই স্থির করিয়াছে। সে মাধবকে তাহার সঙ্কল্পের কথা নিতান্ত ভদ্রভাবে বলিল না। মাধব তাহার যাওয়ার আয়োজন করিবার সুবিধা দিবার জন্য আরও কিছুদিন থাকিয়া গেল এবং আয়োজন সম্পূর্ণ হইলে সকলে মিলিয়া শহর ত্যাগ করিয়া অল্পদিনের মধ্যেই রাধাগঞ্জে পৌঁছিল।
রাজমোহনের ব্যবহার যত কর্কশই হউক, যে অভদ্রতার সঙ্গেই সে তাহার সাহায্য গ্রহণ করিয়া থাকুক, মাধব তাহার প্রতি অতি সুন্দর ব্যবহার করিতে লাগিল। বর্ব্বর ভায়রাভাইয়ের দুর্নীতিপরায়ণ অকৃতজ্ঞ চরিত্রের কথা জানিয়াও শুধু মাতঙ্গিনীর অকারণ দুর্ভাগ্যের প্রতি সহানুভূতি দেখাইবার জন্য সে মাত্র একখানি গ্রামের তত্ত্বাবধানের ভার রাজমোহনের হাতে ছাড়িয়া দিল বটে, কিন্তু তাহার মোটা মাহিনার বন্দোবস্ত করিয়া দিল। রাজমোহনের জন্য একটি বাড়িও নির্ম্মিত হইল, এই বাড়ির সহিতই আমরা গ্রন্থারম্ভে পাঠকের পরিচয় করাইয়াছি। মাধব রাজমোহনকে জন-মজুরের সাহায্যে চাষ করিবার উপযুক্ত জমি দিল। রাজমোহন শেষের কাজটা লইয়াই প্রায় সমস্ত সময় ব্যাপৃত থাকিত, জমিদারি শেরেস্তার কাজ সে বুঝিত না বলিলেই হয়।
কিন্তু এত করিয়াও মাধব রাজমোহনের মন জয় করিতে পারিল না। রাধাগঞ্জে পদার্পণ করা অবধি রাজমোহন হৃদয়হীন ব্যবহারে মাধবকে পীড়িত করিতে লাগিল। মাধবের সহৃদয় ব্যবহারের পরিবর্ত্তে রাজমোহনের ব্যবহারকে শুধু হৃদয়হীন বলিলেই যথেষ্ট হইবে না, রাজমোহন নিষ্ঠুর ব্যবহার করিতে লাগিল, এবং দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সম্পর্ক সামান্যই রহিল। মাধব বাহিরে রাজমোহনের এই অদ্ভুত আচরণ যেন