পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
৪১

তাহাদের প্রাণরক্ষার বহু বিলম্ব ঘটিয়া যাইবে। আসন্ন বিপদের শঙ্কা তাহার মনের সকল বিচারবুদ্ধি দূর করিল, তাহার ভালবাসা দশ গুণ হইয়া ফিরিয়া আসিল, মাতঙ্গিনী আর দ্বিধা করিল না।

 নিজেকে আপাদমস্তক একটা মোটা বিছানার চাদরে আবৃত করিয়া মাতঙ্গিনী সন্তর্পণে দরজা খুলিয়া ঘরের বাহির হইয়া রাজমোহন যেমন করিয়া বাহির হইতে দরজা বন্ধ করিয়াছিল ঠিক সেই ভাবে অত্যন্ত সাবধানতার সহিত দরজা বন্ধ করিল। সীমাহীন শূন্যের তলদেশে দণ্ডায়মান হইয়া নীল আকাশের অনন্ত নীরবতা এবং দূরে বৃক্ষশ্রেণীর ঘন-সন্নিবিষ্ট শীর্ষদেশের নিঃশব্দতার মধ্যে তাহার হৃদয় দুর্ব্বল হইয়া পড়িতেছিল, পা যেন চলিতে চাহিতেছিল না। বুকের উপর দুই হাত চাপিয়া সে আর্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করিল, “দেবতা, শক্তি দাও।” তারপর মনের সমস্ত শক্তি একত্র করিয়া সে দ্রুত অথচ নিঃশব্দ পদচারণা করিতে শুরু করিল। অরণ্যপথে চলিতে চলিতে তাহার হৃদয় স্পন্দিত হইতে লাগিল। অরণ্যের ভয়াবহ নীরবতা ও ছায়াময় অন্ধকার তাহাকে আতঙ্কিত করিল। বনস্পতিসমূহের গ্রস্থিল কাণ্ডগুলি যেন প্রেতমূর্ত্তি ধরিয়া সেই কুটিল অন্ধকারে তাহার গতি পর্য্যবেক্ষণ করিতেছিল। পত্রাচ্ছাদিত এক-একটি বৃক্ষশাখা অন্ধকার পথে মাথার উপর দিয়া চলিয়া যায়, আর তাহার মনে হয় যেন তাহাদের অন্তরালে এক-একটি দৈত্য লুকাইয়া আছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন বনস্থলীর এখানে সেখানে যেন এক-একটি প্রেত অথবা দস্যু ওত পাতিয়া আছে—তাহাদের প্রজ্জ্বলিত চক্ষু। গল্পে শোনা যে সব ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি ও পৈশাচিক হাসি গভীর নিশীথে পথিককে আতঙ্কিত করিয়া মৃত্যুমুখে ঠেলিয়া দেয়, সেই সব মূর্ত্তি ও হাসি যেন তাহার কল্পনায় ভিড় করিয়া আসিল। স্খলিত বৃক্ষপত্রের মৃদু মর্ম্মরধ্বনি; চকিত নৈশ বিহঙ্গের অন্ধকার বৃক্ষশাখার অদৃশ্য স্থান হইতে স্থানান্তরে সরিয়া বসিবার নিমিত্ত পক্ষবিধুনন শব্দ; পতিত বৃক্ষপত্রের উপর সরীসৃপের সামান্য গতিশব্দ। এমন কি