গোপনে প্রতিবেশীদের কুটীরে আশ্রয় লইতে ছুটিল না—তাহারা ভাবিল, সেই অনাড়ম্বর কুটীরগুলিতে দস্যুরা হস্তক্ষেপ করিবে না, সুতরাং তাহাদের সম্পত্তিগুলি রক্ষা পাইবে। গত সন্ধ্যায় যে বিবেকসম্পন্ন পাচিকা কর্ত্রীর সহিত যুদ্ধে জয়লাভ করিয়াছিল, দেখা গেল বোঁচকাবুঁচকী সমেত সেইই সর্ব্বাপেক্ষা কৌশলে দ্রুত ধাবিত হইল। গত সন্ধ্যার যুদ্ধজয়ের বিজয়মাল্যস্বরূপ ঘিয়ের পাত্রটি সে সঙ্গে লইতে ভুলিল না।
উদ্যোগ-পর্ব্বের কলকোলাহল প্রশমিত হইল, আয়োজন সম্পূর্ণ করিয়া অধীর লোকজন নীরবে প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। চন্দ্র অস্ত গিয়াছে। মাতঙ্গিনীর কথার সত্যতা সম্বন্ধে মাধবের সন্দেহ হইতে লাগিল। এই সন্দেহ মাধবের মনের মধ্যে ভাল করিয়া রূপ ধরিতে না ধরিতেই একজন দারোয়ান তাহার কাছে আসিয়া হিন্দীতে বলিল, যাহারা পাহারা দিবার কার্য্যে নিযুক্ত ছিল, তাহাদের মধ্যে একজন পুরানো বাগানের দিকে একটা আলোক দেখিয়াছে। মাতঙ্গিনী যে আমবাগানে দস্যুদের হাতে পড়িতে পড়িতে রক্ষণ পাইয়াছে সেইটিকেই পুরানো বাগান বলা হইত। সে আরও বলিল যে, সে ব্যক্তি সাহস করিয়া বাগানের কাছাকাছি গিয়া দেখিয়াছে কয়েকজন সশস্ত্র লোক সেখানে সম্মিলিত হইয়াছে।
সংবাদবাহক জিজ্ঞাসা করিল, হুজুর হুকুম দিন, আমরা আগে ওদের উপর লাঠি চালাই।
মাধব বলিল, না ভূপসিং, তার দরকার নেই; তোমরা কম লোক গেলে ওদের কাছে কাবু হয়ে পড়বে, বেশি লোক গেলে বাড়ি পাহারা দেবে কে? হয়তো ওদের আর একটা দল কোথাও আছে।
দারোয়ান বলিল, মহারাজের যা হুকুম। তা হ’লে আমরা যেমন আছি, তেমনি থাকি?
—হ্যাঁ, আর এক কাজ কর, তোমরা সবাই মিলে এক সঙ্গে হাঁক দাও, ওদের সমঝিয়ে দাও আমরা তৈরি আছি।