অলক্ষিতভাবে মাতঙ্গিনী দরজা পর্য্যন্ত গিয়া সন্তর্পণে দরজা খুলিয়া বাহির হইয়া গিয়াছে—শব্দ যদি কিছু হইয়াও থাকে যুদ্ধরত দুই মহাবীরের আস্ফালনে তাহা কাহারও শ্রুতিগোচর হয় নাই।
সর্দ্দার ব্যস্ত হইয়া বলিল, ওকে ধরা চাই, নইলে ও আমাদের সর্ব্বনাশ করবে।
রাজমোহন বলিল, হ্যাঁ, তাই চল, কিন্তু সাবধান আমার স্ত্রীর গায়ে কেউ হাত তুলোনা, তাকে তোমরা ধর কিন্তু খুন করতে হ’লে আমিই করব; আমি যদি তা না করি তোমরা আমাকে মেরে ফেলো! আর কেউ যেন ওকে না ছোঁয়। চল, আমিই আগে আগে যাচ্ছি।
তিনজনেই দ্রুত বাহির হইয়া গেল। আকাশ তখনও মেঘাচ্ছন্ন ছিল, টিপ টিপ করিয়া বৃষ্টিও পড়িতেছিল। সর্ব্বত্র পলাতক সুন্দরীর অনুসন্ধান করা হইল। এদিকে প্রভাত হইতে বিলম্ব ছিল না, সময় অত্যন্ত কম।
প্রথমেই রাজমোহন কনকের বাড়ি গিয়া উঁকি মারিয়া দেখিবে ঠিক করিল। সর্দ্দার ও সে পা টিপিয়া টিপিয়া কনকের কুটীর পর্য্যন্ত গেল, তারপর দাওয়ায় উঠিয়া ঝাঁপ তুলিয়া ভিতরে চাহিয়া দেখিল, আলোকের অভাব সত্ত্বেও স্পষ্টই বুঝা যাইতেছিল, মা ও মেয়ে ঘুমাইতেছে।
আশেপাশের ঝোপে ঝাড়ে খোঁজা হইল, কিন্তু কোন ও সন্ধান মিলিল না। মেঘাচ্ছন্ন সিক্ত প্রত্যুষের স্থলে রৌদ্রময় লোহিতাভ প্রভাতের সূচনা দেখা গেল, দস্যুরা আর অধিকক্ষণ বাহিরে থাকা যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করিল না। তাহারা রাত্রিতে কোথায় মিলিত হইবে, তাহা স্থির করিয়া লইয়া পরস্পর পৃথক হইল। সর্দ্দার একথা জানাইতে ভুলিল না যে, রাজমোহন যদি অনুপস্থিত হয় তাহা হইলে—বাক্যটি সমাপ্ত না করিয়া সে একটি কুৎসিত শপথ উচ্চারণ করিল।