মেঘের চাইতে কালো কেশ সূর্য্যকিরণে শুকাইয়া লইতেছিল। পাশেই যৌবন-পরিপুষ্ট পূর্ণাঙ্গী কনকের দেহ সদ্য তৈলমাজ্জিত হইয়া মসৃণ দেখাইতেছিল। তাহার কাঁধে ময়লা একটি গামছা— সুবৃহৎ কলসিটি পাশে খালি পড়িয়া ছিল; মিশি-প্রয়োগে-মলিন দাঁতগুলি ইহাই বলিয়া দিতেছিল যে,প্রাতঃকৃত্য সম্পাদনে কনক ঘরের বাহিরে আসিয়াছে বটে, কিন্তু এখনও তাহা বাকি আছে। দুই সখীতে গভীর কোনও বিষয়ের আলোচনায় ব্যাপৃত ছিল। পাঠককে বলিয়া দিতে হইবে না যে, তাহাদের বার্ত্তালাপের বিষয় আমাদের অজ্ঞাত নহে। মাতঙ্গিনী তাহার একমাত্র বিশ্বাসী ও বুদ্ধিমতী সখীর নিকট বিগত রাত্রির ঘটনাপরম্পরা মৃদুস্বরে বিবৃত করিতেছিল। পাঠকের অনুমতি লইয়া এই কথোপকথনের শেষাংশ তাহার অবগতির জন্য উদ্ধৃত করিতেছি।
কিছুক্ষণ অবাকবিস্ময়ে এই বর্ণনা শুনিয়া; কনক শিহরিয়া বলিয়া উঠিল, মাগো, আমি হ’লে তো ভয়েই ম’রে যেতাম। ধন্যি সাহস তোর, দিদি। আচ্ছা, এখন তুই তোর বরের কাছে ফিরে যাবি?
মাতঙ্গিনী সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়িয়া বলিল, আর কোথাই বা যাব!
কনক অধীরভাবে বলিয়া উঠিল, আমার মাথা খাস দিদি, সেখানে আর ফিরিস না। তারা তোকে জ্যান্ত রাখবে না।
মাতঙ্গিনী কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল, মরতে আমাকে হবেই ভাই, অদৃষ্টের লেখা কে খণ্ডাবে? আর কোথায় আমি আশ্রয় পেতে পারি, বল্।
বন্ধুর দুঃখে সহানুভূতিতে কনকের চোখ জলে ভরিয়া আসিল, সে বলিল, আমি বেশ বুঝছি দিদি, আমাদের বাড়িতে থাকা তোমার চলবে না। কিন্তু বাড়িতে তুমি কিছুতেই ফিরো না। হ্যাঁ, তোমার বোনের কাছে যেতেই বা তোমার আপত্তি কি?
এই কথায় মাতঙ্গিনীর দেহে এক অপূর্ব্ব ভাবান্তর ঘটিল। উদ্গত অশ্রু মুছিয়া ফেলিয়া যে কঠিন সংযত ভাষায় সে মাধবের কাছ হইতে বিদায়