পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
৭৯

মতলব করিতেছে, কোথায়ও বা একটা বিশ্রী রঙ-ওঠা জানালার পাল্লা একটি কব্জা মাত্র আশ্রয় করিয়া ঝুলিতে ঝুলিতে গত বৎসরে অন্তর্হিত সঙ্গী অপর পাল্লাটির বিরহে কাতরতা প্রকাশ করিতেছে; কোনও কোনও জানালায় কব্জা বা পাল্লার চিহ্নমাত্র নাই; নীচজাতীয় টাটের পরদা তাহাদের স্থান অধিকার করিয়া বসিয়া আছে। সেই সুবৃহৎ অট্টালিকার বহির্ভাগের সামান্য স্থানেই চুনবালির প্রলেপ পড়িয়াছিল। চুনবালিশোভিত অপেক্ষাকৃত ভাগ্যসম্পন্ন অংশ, মথুর ঘোষ স্বয়ং না হউন্ তাঁহারই মত মহামহিমান্বিত কেহ যে অধিকার করিয়াছিলেন তাহাতে সন্দেহ নাই; এখানে খুঁজিলে ভিনিসিয়ান খড়খড়ির দুই একটা টুক্‌রা যে না মিলিবে তাহা নয়, কিন্তু দৈত্যের মত ওই বাড়ীটা ওরূপ সূক্ষ্ম অলঙ্কারে শোভিত হইতে প্রস্তুত ছিল না। এই অট্টালিকার বহির্ভাগের অধিক অংশেই চুনবালির ছোঁয়াচ লাগে নাই অনাবৃত ইষ্টকস্তূপের উপর ধূলাকাদা ও কালিঝুলির প্রলেপ পড়িয়া একটা বীভৎস সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করিয়াছিল। এখানে সেখানে ইটের দেওয়াল ফুঁড়িয়া এক-আধটা তরুণ বট অথবা অপেক্ষাকৃত নিম্ন শ্রেণীর কোনও গাছ মাথা খাড়া করিয়া যেন কোনও পারস্ত-সম্রাট-কল্পিত শূন্যস্থিত উদ্যানের একটি ছোটখাট সংস্করণ গড়িয়া তুলিবার বাসনা করিতেছিল।

 বাড়ীটি চারিটি সম্পূর্ণ পৃথক মহলে বিভক্ত। সম্মুখ দিয়া ঢুকিতে গেলেই এক জোড়া ভারী লোহার পাতমোড়া আলকাতরামাখানো কবাট পার হইতে হয়, তাহার পরেই প্রশস্ত উঠান। উঠানের তিন দিক দোতলা বারান্দা দিয়া ঘেরা-বারান্দা খুব উঁচু নয়। তোরণের ঠিক বিপরীত দিকেই পাঁচ খিলানের উপর দণ্ডায়মান সুপ্রশস্ত হল-ঘর। হলঘরের ভিতর-বাহির সর্বত্রই চুনবালির কাজ করা, কিন্তু বহু বর্ষার অত্যাচারে সাদা চুনকাম করা দেওয়ালে কিঞ্চিৎ রঙের সমাবেশ হইয়াছে, বিশেষ করিয়া যে সকল স্থানে ছাদের জলনিকাশের জন্য পাইপ বসানো