পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
রাজমোহনের স্ত্রী

ইঁহাদের নিকট হইতে একটু দূরে বিনম্রভাবে আর একটি স্ত্রীলোক উপবিষ্ট ছিল। তাহাকে দেখিয়া বোধ হইতেছিল, তাহার চিত্ত অশান্ত হইয়াছে, মনে কোনও গভীর দুঃখ বাসা বাধিয়াছে। এই রমণী কে, সহৃদয় পাঠককে নিশ্চয়ই তাহা বলিয়া দিতে হইবে না। সুকীর মা, শাশুড়ী-জগতে তাহার স্থান যে কতখানি উচ্চে তাহার নিজের ভাষাতেই পাঠক তাহার পরিচয় পাইয়াছেন। সুকীর মা তাহার কথা রক্ষা করিয়াছে। সে দ্বিধাগ্রস্ত মাতঙ্গিনীকে তাহার কর্ত্রীঠাকুরাণী অর্থাং মথুর ঘোষের প্রথম পত্নীর নিকটে হাজির করিয়া দিয়াছে। তিনি তাঁহারই নিমিত্ত চুলের গুছি প্রস্তুত করিতেছিলেন।

 মথুরের গৃহিণী ও মাতঙ্গিনীতে অত্যন্ত নিম্ন স্বরে কথাবার্ত্তা হইতেছিল, সুকীর মা অদূরে বসিয়া আপনার মনে বকর বকর করিয়া যাইতেছিল— উভয়ের কাহাকেও সে বাধা দিতেছিল না। এই কথোপকথন অথবা বকুনি বিস্তৃতভাবে পাঠককে শুনাইবার প্রয়োজন নাই। কারণ তাহার বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করিয়া ধরিয়া লইতেছি যে, তিনি অনুমানে ইহাদের কথাবার্ত্তা কি ধরনের হইবে তাহা বুঝিয়া লইয়াছেন। কনকের মিথ্যা গল্প হইতে সুকীর মা হতভাগিনী পলাতক মাতঙ্গিনী সম্বন্ধে যতটুকু সংবাদ আহরণ করিতে পারিয়াছিল, তাহার উপর নিজের কল্পনার অনেকখানি রঙ চড়াইয়া, অনেকগুলি ভাল ভাল প্রক্ষিপ্ত বর্ণনা যোগ করিয়া দিয়া তাহার দুরবস্থা সম্বন্ধে কর্ত্রীঠাকুরাণীকে ওয়াকিবহাল করিয়া দিয়াছে। পরিশেষে নিজের সুখী কন্যার দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিয়া বিবাহিত জীবনের সুখ সম্বন্ধে মন্তব্য করিতেও সে ছাড়ে নাই। সহৃদয়া বৃদ্ধা ঠিকই বিচার করিয়া দেখিয়াছিল যে, এই সকল অতিরঞ্জন বা প্রক্ষিপ্ত বর্ণনায় তাহার মক্কেলের কোনই ক্ষতি হইবে না, অথচ তাহার নিজের বাকচাতুর্য্য দেখাইবার যথেষ্ট অবকাশ সে পাইবে। এই বৃদ্ধার সম্মুখেই আসল ব্যাপারটা খুলিয়া বলিবার সাহস মাতঙ্গিনীর হইল না। ভাল মানুষ