চতুর্দ্দশ অধ্যায়
দাম্পত্য-কলহ সম্বন্ধে গবেষণা—আক্রমণ ও সন্দেহজনক আত্মসমর্পণ
পূর্ব্ব পরিচ্ছেদ হইতে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝিয়াছেন যে, মথুর ঘোষ দুই বিবাহ-বন্ধনজনিত সৌভাগ্য-সুখ অথবা দুর্ভাগ্য-পীড়ার মধ্যে, দুই পত্নীর দাসত্ব বা প্রভুত্ব অথবা দুইই করিয়া দিনাতিপাত করিতেছিল। জ্যেষ্ঠা তারার পরিচয় আমরা দিয়াছি; কনিষ্ঠা চম্পক, বয়সে তারা অপেক্ষা অন্তত আট বছরের ছোট। কি দেহসৌষ্ঠবে কি বর্ণগৌরবে সপত্নী অপেক্ষা সে অনেকাংশে শ্রেষ্ঠ। তদুপরি স্বভাবতই চপল সৌন্দর্য্যের মায়াজাল বিস্তারে সে পটু ছিল, তাহার ফলে তাহার সমস্ত অঙ্গভঙ্গীতে এমন একটা দাম্ভিক ও কঠোর রূপ ফুটিয়া উঠিত যে, সে অঞ্চলের রূপসীরা রূপগর্ব্বে তাহার নিকট পরাজয় মানিয়াছিল; সকলে তাহাকে এজন্য হিংসা করিত। গর্ব্বিতা ও প্রভুত্বপরায়ণা চম্পক বাড়ির সকলকে সর্ব্বময়ী কর্ত্রী হইয়া শাসন করিত। বাড়ির লোকজন তাহাকে ভয় করিত, হয়তো ভিতরে ভিতরে অপছন্দও করিত, কেন না তাহার রুক্ষ মেজাজের পরিচয় পাইয়া সকলেই বুঝিয়াছিল যে, মুখের সৌন্দর্য্যের সহিত হৃদয়ের ঔদার্য্যের বড় বেশি সম্পর্ক নাই এবং ঠিক এই জন্যই জ্যেষ্ঠ হিসাবে সতীন তারার দাবি বেশি হওয়া উচিত হইলেও—সেই ছিল সংসারের সকলের কাছে আসল গৃহকর্ত্রী। মথুর ঘোষের স্বভাবে অবশ্য ভালবাসিবার বা ভালবাসা পাইবার মত কিছু ছিল না; এবং ইহাও নিশ্চয় যে প্রেম তাহার মনের শ্রেষ্ঠ বৃত্তিও নয়, কিন্তু সৌন্দর্য্যের মোহ সকলের উপরেই প্রভাব বিস্তার করে, তাই মথুরও তাহার দ্বিতীয়া স্ত্রীর অনুরক্ত ছিল। মনের সুরুচি ও সুবুদ্ধি প্রণয়বৃত্তিকে আবেগময় ও স্বর্গীয় করিয়া