পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
৮৭

হৃদয়ে হৃদয়ে মিলন ঘটায়, কিন্তু ইন্দ্রিয়পরবশ মনে, ইহা কামলালসা অথবা নারী-মাধুর্য্যের অজানা রহস্যের কাছে অন্ধ আত্মসমর্পণেই শেষ হয়। কিন্তু হৃদয়-বৃত্তির প্রবলতা দুই ক্ষেত্রেই সমান তীক্ষ্ন হইতে পারে। সুতরাং ইহা আশ্চর্য্যের বিষয় নয় যে মথুর চম্পককে ভালবাসিত, ভালবাসা যদি নাও বলা চলে, সে চম্পকের প্রতি অধীর ও অন্ধ ভাবে অনুরক্ত ছিল।

 চারিপাশের সকলের স্বার্থকে নিজের স্বার্র্থসিদ্ধির প্রয়োজনে লাগাইয়া কঠিন মনের শক্তিতে যে ব্যক্তি সকলের প্রভু হইয়াছিল, এই ছলনাময়ীর ইচ্ছাশক্তির কাছে সে ছিল একেবারে ক্রীতদাস। তারার স্বভাবে এমন মাধুর্য্য ও ধৈর্য্য ছিল যে তাহার বিরুদ্ধে ক্রোধের কোন কারণ তাহার থাকিতে পারে না, কিন্তু তারা সম্বন্ধে মথুর উদাসীন ছিল, হয়তো সে ঔদাসীন্য এত বেশি যে তারার প্রতি সে কোনদিন দুর্ব্ব্যবহারও করিতে পারিত না।

 রাজমোহনের স্ত্রী তাহাদের বাড়িতে আশ্রয় লইবে, ইহার অনুমতি স্বামীর নিকট হইতে পাইতে তারার বেগ পাইতে হয় নাই। উত্তরে মথুর বলিয়াছিল, দেবতা ও ব্রাহ্মণের আশীর্ব্বাদে আমার বাড়িতে খাওয়া-পরার অসদ্ভাব নাই; আর তুমি যখন বলছ, মেয়েটির স্বভাব ভাল, তখন যতদিন ইচ্ছা সে আমার এখানে থাকতে পারে। কিন্তু সরলমনা তারা বুঝিয়া উঠিতে পারে নাই যে, কাজে ইহার প্রতিকূলাচরণ হইবে এবং তাহা তাহার এই সহৃদয়তাকে ব্যর্থ করিবে। চম্পক পছন্দ করে নাই যে, তাহার সতীনের আনুকূল্যে এ বাড়িতে বাহিরের কেহ আশ্রয় পায়।

 মথুর ঘোষের অট্টালিকার উপর অস্তমান সূর্য্যের ম্লান কিরণ আসিয়া পড়িয়াছে—মাতঙ্গিনীর ভাগ্যে যে দিন নানা অশুভ বিপদজালের সূচনা দেখা দিয়াছে, সে দিনখানি সন্ধ্যার দিকে ঢলিয়া পড়িয়াছে। তেতলার এক খোলা বারান্দার উপর তির্য্যকভাবে সূর্য্যকিরণ রহিয়া রহিয়া দেখা দিতেছে। শুধু বারান্দার উপর বসিয়া তারা তাহার মেয়ের খোঁপা