বাঁধিতে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু সে বিনুনি মা কিংবা মেয়ে কাহারও পছন্দমাফিক হইতেছে না। মাতঙ্গিনী কাছেই বসিয়া ‘হুঁ, হাঁ’ করিয়া কতকগুলি অশিষ্ট ও বিরক্তিকর প্রশ্নের উত্তর দিতেছে। প্রশ্নকারিণী চম্পক—মুখরা এক নাপিতানীর সাহায্যে সে তাহার ছোট পা দুইটিতে আলতা পরিতে পরিতে মাতঙ্গিনীকে অনর্গল প্রশ্ন করিয়া যাইতেছিল। কেমন করিয়া ইহা সে বুঝিবে যে, তাহার স্বামী যাহাকে কৃপাপরবশ হইয়া গৃহে আশ্রয় দিয়াছে এবং ইচ্ছা করিলে যে কোন মুহূর্ত্তে সে যাহাকে ঘরছাড়া করিতে পারে, সেই আশ্রিতা তাহার মুখের কোন প্রশ্নের জবাব দিতে অনিচ্ছুক হইতে পারে। মাতঙ্গিনী অত্যন্ত সংক্ষেপে ও বিনীতভাবে উত্তর দিতেছিল, কিন্তু তাহাতে এই সুন্দরীর গর্ব্বে আঘাত লাগায় সে আরও চটিয়া উঠিতেছিল।
মাতঙ্গিনীকে আহ্বান করিয়া তারা বলিল, দেখছ, দুপুর বেলা থেকে চেষ্টা করেও এ মেয়ের খোঁপা কিছুতে বেঁধে উঠতে পারলাম না। তুমি বোধ হয় ভাল পার। যদি তুমি এই বিনুনিটা কি করে বাঁধি দেখিয়ে দাও, তবে কাজটা শেষ করতে পারি। মাতঙ্গিনী সেদিনকার জন্য খোঁপা বাঁধিবার অনুমতি চাহিল। বলিল, আমিও ভাল পারি না, কিন্তু চেষ্টা করে দেখি।
মেয়ের পিছনে বসিয়া মাতঙ্গিনী বিনুনি খুলিয়া নূতন করিয়া খোঁপা বাঁধিতে লাগিল। চম্পক বাধা দিয়া বলিল, আহা! দিদি বুঝি নিজেদের সেই পশ্চিমী খোঁপা বাঁধছ। যেমন ছিল তাই বরং ভাল।
মাতঙ্গিনী উত্তর দিল, এ দেশের মত খোঁপা বাঁধতে আমি যদি পারি, তবে এই সুন্দর মুখকে আরও সুন্দর দেখাবে।
চম্পক হাঁ হাঁ করিয়া উঠিল, না বাপু না, এ খোঁপা বাঁধতে হবে না, নষ্টা স্ত্রীলোকেরা অমন খোঁপা বাঁধে। গেরস্থের মেয়ের এ খোঁপা ভাল মানাবে না।’