জয়সিংহ। মহারাজ গোবিন্দমাণিক্য এইরূপ আদেশ করিয়াছেন?
রঘুপতি। হাঁ গো, এক কথা কতবার বলিব!
জয়সিংহ অনেকক্ষণ কিছুই বলিলেন না, কেবল আপন মনে বলিতে লাগিলেন, ‘মহারাজ গোবিন্দমাণিক্য!’ গোবিন্দমাণিক্যকে জয়সিংহ ছেলেবেলা হইতে দেবতা বলিয়া জানিতেন। আকাশের পূর্ণচন্দ্রের প্রতি শিশুদের যেমন একপ্রকার আসক্তি আছে, গোবিন্দমাণিক্যের প্রতি জয়সিংহের সেইরূপ মনের ভাব ছিল। গোবিন্দমাণিক্যের প্রশান্ত সুন্দর মুখ দেখিয়া জয়সিংহ প্রাণ-বিসর্জন করিতে পারিতেন।
রঘুপতি কহিলেন, “ইহার একটা তো প্রতিবিধান করিতে হইবে।”
জয়সিংহ কহিলেন, “তা অবশ্য। আমি মহারাজের কাছে যাই, তাঁহাকে মিনতি করিয়া বলি—”
রঘুপতি। সে চেষ্টা বৃথা।
জয়সিংহ। তবে কী করিতে হইবে?
রঘুপতি কিয়ৎক্ষণ ভাবিয়া বলিলেন, “সে কাল বলিব। কাল তুমি প্রভাতে কুমার নক্ষত্ররায়ের নিকটে গিয়া তাঁহাকে গোপনে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে অনুরোধ করিবে।”
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
প্রভাতে নক্ষত্ররায় আসিয়া রঘুপতিকে প্রণাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঠাকুর, কী আদেশ করেন?”
রঘুপতি কহিলেন, “তোমার প্রতি মায়ের আদেশ আছে। আগে মাকে প্রণাম করিবে চলো।”
উভয়ে মন্দিরে গেলেন। জয়সিংহও সঙ্গে সঙ্গে গেলেন। নক্ষত্ররায় ভুবনেশ্বরী-প্রতিমার সম্মুখে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করিলেন।
রঘুপতি নক্ষত্ররায়কে কহিলেন, “কুমার, তুমি রাজা হইবে।”