পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
১১

আপনার পুত্ত্রের সাক্ষাতে বলিলাম তাহাতে ক্ষতি কি? পুত্ত্রকে বিশেষ করিয়া বলিয়া দিল—আমার দিব্য এ কথা কাহারও কাছে বলিও না।

 পুত্ত্র স্বীকার করিল, কিন্তু দিল্লী ফিরিয়া গিয়াই, আপনার উপপত্নীর আছে গল্প করিল! বলিয়া দিল জান্‌! কাহারও সাক্ষাতে বলিও না। জান্ তখনই আপনার প্রিয় সখীর কাছে গিয়া বলিল। তাহার প্রিয়সখী দুই চারি দিন পরে বাদশাগের অন্তঃপুরে গিয়া বাঁদী স্বরূপ নিযুক্ত হইল। সে অন্তঃপুরে পরিচারিকাগণের নিকট এই রহস্যের গল্প করিল। ক্রমে বাদশাহের বেগমেরা শুনিল। যোধপুরী বেগম বাদশাহের কাছে গল্প করিল।

 ঔরঙ্গজের সসাগর ভারতের অধীশ্বর। ঈদৃশ ঐশ্বর্য্যশালী রাজাধিরাজ এক চঞ্চলা বালিকার কথায় রাগ করিবেন ইহা কোন প্রকারে সম্ভব নহে। কিন্তু ক্রুরমনা ঔরঙ্গজেব সে প্রকৃতির বাদশাহ ছিলেন না। যে যত ক্ষুদ্র হৌক, যে যেমন মহৎ হউক, কেহ তাঁহার প্রতিহিংসার অতীত নহে। অমনি স্থির করিলেন, যে সেই অপরিপক্কবুদ্ধি বালিকাকে ইহার গুরুতর প্রতিফল দিবেন। বেগমকে বলিলেন, “রূপনগরের রাজকুমারী দিল্লীর রাজপুরে আসিয়া বাঁদীদিগের তামাকু সাজিবে।”

 যোধপুরেশ্বরকুমারী শিহরিয়া উঠিল— বলিল “সে কি জাঁহাপনা! যাহার আজ্ঞায় প্রতিদিন রাজরাজেশ্বরগণ রাজ্যচ্যুত হইতেছে—এক সামান্যা বালিকা কি তাহার ক্রোধের যোগ্য!”

 রাজেন্দ্র হাসিলেন—কিছু বলিলেন না কিন্তু সেই দিনেই