পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
রাজসিংহ।

বল, পৃথিবীতে এত বড় লোক কে আছে, যে তাহার কন্যা দিল্লীর তক্তে বসিতে বাসনা করে না? পৃথিবীশ্বরী হইতে তোমার এত অসাধ কেন?

 চঞ্চল রাগ করিয়া বলিল, “তুই এখান হইতে উঠিয়া যা।”

 নির্ম্মল দেখিল ওপথে কিছু হইবে না। তবে আর কোন পথে রাজকুমারীর কিছু উপকার করিতে পারে তাহার সন্ধান করিতে লাগিল। বলিল,

 “আমি যেন উঠিয়া গেলাম—কিন্তু যাঁহার দ্বারা প্রতিপালন হইতেছি; আমাকে তাঁহার হিত খুঁজিতে হয়। তুমি যদি দিল্লী না যাও, তবে তোমার বাপের দশা কি হইবে তাহা কি একবার ভাবিয়াছ?”

 চ। ভাবিয়াছি। আমি যদি না যাই,তবে আমার পিতার কাঁধে মাতা থাকিবে না— রূপনগরের গড়ের একখানি পাতর থাকিবে না। তা ভাবিয়াছি—আমি পিতৃহত্যা করিব না। বাদশাহের ফৌজ আসিলেই আমি তাহাদিগের সঙ্গে দিল্লীযাত্রা করিব। ইহা স্থির করিয়াছি।

 নির্ম্মল প্রসন্ন হইল। বলিল, “আমিও সেই পরামর্শই দিতেছিলাম।”

 রাজকুমারী আবার ভ্রূভঙ্গী করিলেন— বলিলেন, “তুই কি মনে করেছিস্ যে আমি দিল্লীতে গিয়া মুসলমান বানরের শয্যায় শয়ন করিব? হংসী কি বকের সেবা করে?”

 নির্ম্মল কিছুই বুঝিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তবে কি করিবে?”

 চঞ্চলকুমারী হস্তের একটি অঙ্গুরীয় নির্ম্মলকে দেখাইল।