পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
২১

হইয়াছে, একত্রে যাই চলুন।” ব্রাক্ষণ আনন্দিত হইয়া তাহাদিগের সঙ্গী হইলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “উদয়পুর আর কতদূর।, বণিকেরা বলিল, “নিকট। আজ সন্ধ্যায় মধ্যে উদয়পুর পৌছিতে পারিব। এ সকল স্থান রাণার রাজ্য।”

 রূপ কথোপকথন করিতে করিতে তাহারা চলিতে ছিল। পার্ব্বত্য পথ, অতিশয় দুরারোহণীয়, এবং দুরবরোহণীয়, সচরাচর বসতিশূন্য। কিন্তু এই দুর্গম পথ প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছিল—এখন সমতল ভূমিতে অবরোহণ করিতে হইবে। পথিকেরা এক অনির্ব্বচনীয় শোভাময়, অধিত্যকায় প্রবেশ করিল। দুই পার্শ্বে অনতি উচ্চ পর্ব্বতদ্বয়, হরিৎ বৃক্ষাদিশোভিত হইয়া আকাশে মাথা তুলিয়াছে; উভয়ের মধ্যে কলনাদিনী ক্ষুদ্রা প্রবাহিনী নীলকাচপ্রতিম সফেন জলপ্রবাহে উপলদল ধৌত করিয়া বনাসের অভিমুখে চলিতেছে। তটিনীর ধার দিয়া মনুষ্যগম্য পথের রেখা পড়িয়াছে। সেখানে নামিলে, আর কোন দিক্ হইতে কেহ পথিককে দেখিতে পায় না; কেবল পর্ব্বতদ্বয়ের উপর হইতে দেখা যায়।

 সেই নিভৃতস্থানে অবরোহণ করিয়া, একজন বণিক্ ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করিল,

 “তোমার ঠাঁই টাকা কড়ি কি আছে?”

 ব্রাহ্মণ প্রশ্ন শুনিয়া চমকিত ও ভীত হইলেন। ভাবিলেন বুঝি এখানে দস্যুর বিশেষ ভয়, তাই সতর্ক করিবার জন্য বণিকেরা জিজ্ঞাসা করিতেছে। দুর্ব্বলের অবলম্বন মিথ্যা কথা। ব্রাহ্মণ বলিলেন, “আমি ভিক্ষুক ব্রাহ্মণ আমার কাছে কি থাকিবে?”