পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
রাজসিংহ।

 বণিক বলিল, “যাহা কিছু থাকে আমাদের নিকট দাও। নহিলে এখানে রাখিতে পারিবে না।”

 ব্রাহ্মণ ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন। একবার মনে করিলেন “রত্নবলয় রক্ষার্থ বণিক্‌দিগকে দিই;” আবার ভাবিলেন, “ইহারা অপরিচিত, ইহাদিগকেই বা বিশ্বাস কি?” এই ভাবিয়া ইতস্ততঃ করিয়া ব্রাহ্মণ পূর্ব্ববৎ বলিলেন, “আমি ভিক্ষুক আমার কাছে কি থাকিবে?”

 বিপদ কালে যে ইতস্ততঃ করে সেই মারা যায়। ব্রাহ্মণকে ইতস্ততঃ করিতে দেখিয়া ছদ্মবেশী বণিকেরা বুঝিল যে অবশ্য ব্রাহ্মণের কাছে বিশেষ কিছু আছে। একজন তৎক্ষণাৎ ব্রাক্ষণের ঘাড় ধরিয়া ফেলিয়া দিয়া তাহার বুকে আঁটু দিয়া বসিল—এবং তাহার মুখে হাত দিয়া চাপিয়া ধরিল। ব্রাহ্মণ বাঙ্‌নিষ্পত্তি করিতে না পারিয়া নারায়ণ স্মরণ করিতে লাগিল। আর একজন, তাহার গাঁটরি কাড়িয়া লইয়া খুলিয়া দেখিতে লাগিল। তাহার ভিতর হইতে চঞ্চলকুমারীপ্রেরিত বলয়, দুইখানি পত্র, এবং দুই আশরফি পাওয়া গেল। দস্যু তাহা হস্তগত করিয়া সঙ্গীকে বলিল, “আর ব্রহ্মহত্যা করিয়া কাজ নাই। উহার যাহা ছিল, তাহা পাইয়াছি। এখন উহাকে ছাড়িয়া দে।”

 আর একজন দস্যু বলিল, “ছাড়িয়া দেওয়া হইবে না। ব্রাহ্মণ তাহা হইলে এখনই একটা গোলযোগ করিবে। আজ কাল রাণা রাজসিংহের বড় দৌরাত্ম—তাহার শাসনে বীর পুরুষে আর অন্ন করিয়া খাইতে পারে না। উহাকে এই গাছে বাঁধিয়া রাখিয়া যাই।”