পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
২৯

তুমি উহা মারিতে পারিবে না—এই দেখ।” এই কথা বলিতে না বলিতে রাজপুত তাঁহার হাতের খালি পিস্তল দস্যুর দক্ষিণ হস্তের মুষ্টি লক্ষ্য করিয়া ছুঁড়িয়া মারিলেন; দারূণ প্রহারে তাহার হাতের বর্ষা খসিয়া পড়িল। রাজপুত তাহা তুলিয়া লইয়া, মাণিকলালের চুল ধরিলেন। এবং অসি উত্তোলন করিয়া তাহার মস্তক ছেদনে উদ্যত হইলেন।

 মাণিকলাল তখন কাতরস্বরে বলিল, “মহারাজাধিরাজ! আমার জীবনদান করুন— রক্ষা করুন— আমি শরণাগত!”

 রাজপুত, তাহার কেশ ত্যাগ করিলেন, তরবারি নামাইলেন। বলিলেন,

 “তুই মরিতে এত ভীত কেন?”

 মাণিকলাল বলিল, “আমি মরিতে ভীত নহি। কিন্তু আমার একটি সাতবৎসরের কন্যা আছে; সে মাতৃহীন, তাহার আর কেহ নাই—কেবল আমি। আমি প্রাতে তাহাকে আহার করাইয়া বাহির হইয়াছি, আবার সন্ধ্যাকালে গিয়া আহার দিব, তবে সে খাইবে, আমি তাহাকে রাখিয়া মরিতে পারিতেছি না। আমি মরিলে সে মরিবে। আমাকে মারিতে হয়, আগে তাহাকে মারুন।”

 দস্যু কাঁদিতে লাগিল, পরে চক্ষের জল মুছিয়া বলিতে লাগিল, “মহারাজাধিরাজ! আমি আপনার পাদস্পর্শ করিয়া শপথ করিতেছি, আর কখন দস্যুতা করিব না। চিরকাল আপনার দাসত্ব করিব। আর যদি জীবন থাকে, একদিন না একদিন এ ক্ষুদ্র ভৃত্য হইতে উপকার হইবে।”

 রাজপুত বলিলেন, “তুমি আমাকে চেন?”