পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
রাজসিংহ।

একটা পিসীর সম্মুখে ফেলিয়া দিল; এবং কন্যাকে তাহার কাছে ছাড়িয়া দিয়া বলিল, “যা! তোর দিদির কোলে গিয়া বস্।”

 পিসীঠাকুরাণী কিছু লোভে পড়িলেন। মনে মনে বিলক্ষণ জানিতেন যে, এক মোহরে ঐ শিশুর একবৎসর গ্রাসাচ্ছাদন চলিতে পারে—মাণিকলাল কেবল দুই মাসের করার করিতেছে। অতএব কিছু লাভের সম্ভাবনা। তার পর মাণিক রাজদরবারে চাকরি স্বীকার করিয়াছে—চাহি কি বড়মানুষ হইতে পারে, তা হইলে কি পিসীকে কখন কিছু দিবে না? মানুষটা হাতে থাকা ভাল।

 পিসী তখন মোহরটা কুড়াইয়া লইয়া বলিল “তার আশ্চর্য্য কি বাছা—তোমার মেয়ে মানুষ করিব সে কি বড় ভারি কাজ! তুমি নিশ্চিন্ত থাক। আয় রে জান্ আয়!” বলিয়া পিসী কন্যাকে কোলে তুলিয়া লইল।

 কন্যাসম্বন্ধে এইরূপ সন্দোবস্ত হইলে মাণিকলাল নিশ্চিত চিত্তে গ্রাম হইতে নির্গত হইল। কাহাকে কিছু না বলিয়া রূপনগরে যাইবার পার্ব্বত্যপথে আরোহণ করিল।

 মাণিকলাল, এইরূপ বিচার করিতেছিল—ঐ অধিত্যকায় অনেকগুলি অশ্বারোহী আসিয়াছিল কেন? এখানে রাণাও একাকী ভ্রমিতে ছিলেন— কিন্তু উদয়পুর হইতে এতদূর রাণা, একাকী আসিবার সম্ভাবনা নাই। অতএব উহারা রাণার সমভিব্যাহারী অশ্বারোহী। তার পর, দেখা গেল উহারা উত্তর হইতে আসিয়াছে—উদয়পুর অভিমুখে যাইতেছিল— বোধ হয় রাণা মৃগয়া বা বনবিহারে গিয়া থাকিবেন—উদয়পুর ফিরিয়া