পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
৫৫

হইল—মাণিকলাল পত্র লইয়া মুসলমানশিবিরে উপস্থিত হইল। শিবিরমধ্যে মহাগোলোযোগ—কোন শৃঙ্খলা নাই—নিয়ম নাই। তাহার ভিতরে বাজার বসিয়া গিয়াছে—রঙ্গ তামাসা রোশনাইয়ের ধুম লাগিয়াছে। মাণিকলাল মোগল দেখিলেই জিজ্ঞাসা করে, “মহম্মদ খা ঁকে মহাশয়? তাঁহার নামে পত্র আছে।” কেহ উত্তর দেয় না—কেহ গালি দেয়;—কেহ বলে চিনি না—কেহ বলে খুঁজিয়া লও। শেষ একজন মোগল বলিল “মহম্মদ খাঁকে চিনি না, কিন্তু আমার নাম নুর মহম্মদ খাঁ। পত্র দেখি, দেখিলে বুঝিতে পারিব পত্র আমার কি না।”

 মাণিকলাল সানন্দচিত্তে তাহার হস্তে পত্র দিল—মনে জানে, মোগল যেই হউক, ফাঁদে পড়িবে। মোগলও ভাবিল— পত্র যারই হউক, আমি কেন এই সুবিধাতে বিবিটাকে দেখিয়া আসি না। প্রকাশ্যে বলিল, “হাঁ পত্র আমারই বটে। চল, আমি তোমার সঙ্গে যাইতেছি।” এই বলিয়া মোগল তাম্বু মধ্যে প্রবেশ করিয়া চুল আঁচড়াইয়া গন্ধদ্রব্য মাখিয়া পোষাক পরিয়া বাহির হইল। বাহির হইয়া জিজ্ঞাসা করিল,

 “ওরে ভৃত্য, সে স্থান কতদূর ”

 মাণিকলাল যোড়হাত করিয়া বলিল “হুজুর, অনেক দূর! ঘোড়ায় গেলে ভাল হ‍ইত।”

 “বহুত আচ্ছা” বলিয়া খাঁ সাহেব ঘোড়া বাহির করিয়া চড়িতে যান, এমন সময় মাণিকপাল আবার যোড়হাত করিয়া বলিল,

 “হুজুর! বড় ঘরের কথা—হাতিয়ার বন্ধ হইয়া গেলেই ভাল হয়।”