পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
রাজসিংহ।

 নুতন নাগর ভাবিলেন, সে ভাল কথা—জঙ্গী জোয়ান আমি; হাতিয়ার ছাড়া কেন যাইব। তখন অঙ্গে হাতিয়ার বাঁধিয়া তিনি অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিলেন।

 নির্দ্দিষ্ট স্থানে উপনীত হইয়া মাণিকলাল বলিল, “এই স্থানে উতারিতে হইবে। আমি আপনার ঘোড়া ধরিতেছি, আপনি গৃহমধ্যে প্রবেশ করুন।”

 খাঁ সাহেব নামিলেন—মাণিকলাল ঘোড়া ধরিয়া রহিল। খাঁ বাহাদুর সশস্ত্রে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিতেছিলেন, পরে মনে পড়িল যে হাতিয়ার বন্দ হইয়া রমণীসম্ভাষণে যাওয়া বড় ভাল দেখায় না। ফিরিয়া আসিয়া মাণিকলালের কাছে অস্ত্রগুলিও রাখিয়া গেলেন। মাণিকলালের আরও সুবিধা হইল।

 গৃহমধ্যে প্রবেশ করিয়া খাঁ সাহেব দেখিলেন, যে তক্তপোষের উপর উত্তম শয্যা; তাহার উপর সুন্দরী বসিয়া আছে—আতর গোলাবের সৌগন্ধে ঘর আমোদিত হইয়াছে— চারিদিকে ফুল বিকীর্ণ হইয়াছে। এবং সম্মুখে আলবোলায় সুগন্ধি তামাকু প্রস্তুত আছে।—খাঁ সাহেব, জুতা খুলিয়া, তক্তপোষে বসিলেন, বিবিকে মিষ্টবচনে সম্ভাষণ করিলেন— পরে পোষাকটি খুলিয়া রাখিয়া, ফুলের পাখা হাতে লইয়া বাতাস খাইতে আরম্ভ করিলেন, এবং আলবোলার নল মুখে পুরিয়া সুখের আবেশে টান দিতে লাগিলেন। বিবিও তাঁহাকে দুই চারিটা গাঢ় প্রণয়ের কথা বলিয়া একেবারে মোহিত করিল।

 অর্দ্ধদণ্ড হইতে না হইতে মাণিকলাল আসিয়া দ্বারে ঘা মারিল। বিবি বলিল, “কে ও?”