পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
রাজসিংহ।

বলিলেন, “দেবদেব মহাদেব! মরিতে চলিলাম। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি বালিকার মরণে তেমার এত তুষ্টি কেন? প্রভো! আমি বাঁচিল কি তোমার সৃষ্টি চলিত না? যদি এতই মনে ছিল, কেন আমাকে রাজার মেয়ে করিয়া সংসারে পাঠাইয়াছিলে?”

 মহাদেবের বন্দনা করিয়া চঞ্চলকুমারী মাতৃচরণ বন্দনা করিতে গেলেন! মাতাকে প্রণাম করিয়া চঞ্চল কতই কাঁদিল। পিতার চরণে গিয়া প্রণাম করিল। পিতাকে প্রণাম করিয়া চঞ্চল কতই কাঁদিল! তার পর একে একে সখীজনের কাছে, চঞ্চল বিদায়গ্রহণ করিল। সকলে কাঁদিয়া গণ্ডগোল করিল। চঞ্চল কাহাকে অলঙ্কার, কাহাকে খেলেনা, কাহাকে অর্থ দিয়া পুরস্কৃত করিলেন। কাহাকে বলিলেন; “কাঁদিও না; আমি আবার আসিব।” কাহাকে বলিলেন, “কাঁদিও না; দেখিতেছ না, আমি পৃথিবীশ্বরী হইতে যাইতেছি?” কাহাকেও বলিলেন “কাঁদিও না—কাঁদিলে যদি দুঃখ ষাইত তবে আমি কাঁদিয়া রূপনগরের পাহাড় ভাসাইতাম!”

 সকলের কাছে বিদায় গ্রহণ করিয়া, চঞ্চলকুমারী শিবিকারোহণে চলিলেন। একসহস্র অশ্বারোহী সৈন্য শিবিকার অগ্রে স্থাপিত হইয়াছে; এক সহস্র পশ্চাতে। রজতমণ্ডিত, রত্নখচিত সে শিবিকা, বিচিত্র সুবর্ণখচিত বস্ত্রে আবৃত হইয়াছে। আশা সোঁটা লইয়া চোপদার বাগ্‌জালে গ্রাম্য দর্শকবর্গকে আনন্দিতা করিতেছে। চঞ্চলকুমারী শিবিকায় আরোহণ করিলেন। দুর্গমধ্য হইতে শঙ্খ নিনাদিত হইল; কুসুম ও লাজাবলীতে শিবিকা পরিপূর্ণ হইল; সেনাপতি চলিবার